টরেন্টো স্টার এবং রিয়ারসন স্কুল অব জার্নালিজমের সাম্প্রতিক তদন্তের ভিত্তিতে ইউবিসি সহ কানাডায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু কিছু ছাত্র ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা যথেষ্ট নয় বলে দাবী করেছেন। তা সত্ত্বেও, রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে যে অনেক কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় মানসিক স্বাস্থ্য তহবিলকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে কিংবা করার চেষ্টা করছে, যদিও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এই বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
ইউবিসি এর কাউন্সেলিং সার্ভিসের ডিরেক্টর চেরিল ওয়াশবার্ন একটি ইমেইলে বলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল এবং ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের স্কুল বছর পর্যন্ত অর্থাৎ গত ২ বছরে স্কুল গুলোর জন্য কাউন্সেলিং সার্ভিসে অর্থায়ন ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, “আরও বেশি ছাত্র ছাত্রীদের কাউন্সেলিং এর জন্য পাঠানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রচারণা চালানোর লক্ষ্য হচ্ছে এই ধরণের অসুস্থতায় সাহায্য চাওয়া নিয়ে এক ধরণের সামাজিক ভ্রান্তি রয়েছে সেই সামাজিক ভ্রান্তিকে ভাঙা এবং একদম দূর করা”।
ওয়াশবার্ন বলেন, “আমরা অনুমান করছি যে দিন দিন সময়ের সাথে সাথে সামাজিক ভ্রান্তি কমছে, এবং মানুষ ধীরে ধীরে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে”। দীর্ঘ প্রতীক্ষার সময় নিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে অভিযোগ আছে। তিনি বলেন ছাত্রদের চাহিদা সারা বছর ধরে আলাদা এবং এবং তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফলাফল পাবে।
তিনি বলেন, “ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী তাদের দুটি কাউন্সেলিং এর মধ্যের সময় নির্ভর করবে। তাদের মানসিক চাহিদা অনু্যায়ী কাউন্সেলিং ভিন্ন হবে”। তিনি আরও বলেন ইউবিসিতে অর্থায়ন বৃদ্ধির একটি কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরণের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন নেই।
ওয়াশবার্ন বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আকার অথবা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যত পরিমাণ শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের সেবা প্রদানের জন্য লোকসংখ্যা এবং পরিসেবা খুবই কম ছিল”।
ইউবিসি প্রেসিডেন্ট সান্তা ওনো একজন ছাত্র হিসাবে তার বিষণ্ণতা এবং তার মানসিক স্বাস্থ্য ছাত্র থাকাকালীন কেমন ছিল তা জানিয়েছেন, তিনি কিভাবে তার মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে লড়াই করেছেন তা জানিয়েছেন। এবং বর্তমানে তিনি ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ছাত্র ছাত্রীদের কথা
ইউবিসি কর্তৃক এত অর্থ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগের পর ও কিছু কিছু ছাত্র ছাত্রী মনে করেন এই সেবা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। জি ইউন কিম ২০১৪ সালে প্রথমবারের মত কাউন্সেলিং এ যাওয়ার পর কোন কাউন্সেলরকে পাওয়ার জন্য তাকে ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এবং সে সে কাউন্সেলরকে পেয়েছিল তিনি খুব একটা অভিজ্ঞ ছিল না যে কিমকে সাহায্য করতে পারবে।
কিম বলেন, “অবশ্যই তিনি আমাকে যা বলছিলেন তা বইয়ের কথা, কিন্তু আসলে সেসব কথা আমার জন্য যথেষ্ট বা আমার প্রয়োজনীয় ছিল না”।
পরে ঐ বছরে কিম তিনবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। কোন না কোনভাবে সে বেচে যায় এবং ঐ মাসের শেষের দিকে স্কুলে ফিরে আসেন। তিনি ঐ দিনই একজন কাউন্সেলরকে পেয়ে যান। কিন্তু কাউন্সেলর এর সাথে কথা বলে তিনি বুঝতে পারেন তার যে সেবার দরকার তা ইউসিবি দিতে পারবে না। কাউন্সেলর যা বলছিলেন তা অন্তত কিমকে আত্মহত্যা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সাহায্য করতে পারবে না।
কিম বলেন, “একটি সেশন আমাকে আত্মহত্যা থেকে দূরে রাখতে অথবা আত্মহত্যা সম্পর্কিত মতাদর্শ প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। আমার জীবনের বিভিন্ন দিক ইউসিবি কাউন্সেলিং এর সেবার জন্য অনেক বেশি জটিল ছিল”।
তিনি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা নেয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। সেখানে তার মতে আরও ভাল সেবা পাওয়া সম্ভব। তিনি তার প্রয়োজনমত সেবা পেতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।
কিন্তু ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কিম একদম স্কুল ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একটি সামাজিক ব্লগে তিনি তার আবেগ প্রকাশ করেন। স্কুলে পড়াশুনার চাপ, অথবা সবসময় ক্লাসে অকৃতকার্য হওয়ার লজ্জা এসব নিয়ে তিনি লিখেন এবং তার মত শত শত ছাত্র ছাত্রী যারা একই সমস্যায় ভুগছেন তাদের সাথে মিলিত হন।
কিম বলেন, “গত বছরগুলোতে আমি শত শত ছাত্র ছাত্রীদের কাহিনী শুনেছি যা একদম আমার মত। আমি তাদের জীবনের এসব কাহিনী শুনে, তাদের বার্তা গুলো পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছি”।
কিম ইউবিসি তে ফিরে এসেছেন তবে একজন ছাত্রী হিসেবে নয়, ইউবিসি এর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উকিল হিসেবে। তার ব্লগ ‘দ্যা টিপিং পয়েন্ট’ ইউবিসি মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এক আন্দোলনে পরিবর্তিত হয়েছে।
কিম বলেন, “ইউবিসি একটি উন্নয়নশীল স্কুল মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। কিন্তু এটি কাজ করে একদম শুরুর পর্যায়ের মানসিক সমস্যা নিয়ে। আমি চাই এটি ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাসে বার বার অকৃতকার্য হলে কি করতে হবে, তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে পরিচয় করা, প্যানিক আক্রমণ হলে কি করতে হবে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করুক”। তিনি বলেন ছাত্র ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা যা তাদের উপর প্রচণ্ড রকমের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এবং এই শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্র ছাত্রীদের ধারণ ক্ষমতার সাথে অনমনীয়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউন্সেলিং সব অর্থ বিনিয়োগ করতে পারি কিন্তু যদি আমরা সমস্যা সৃষ্টির মূল নিয়ে কথা না বলি তাহলে অর্থ বিনিয়োগের কোন মানে হয় না”।
তথ্যসূত্র-
(http://www.cbc.ca/news/canada/british-columbia/ubc-mental-health-demand-growing-1.4142424)
কাজী কামরুন নাহার, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম