করোনা মহামারী কালীন সময়ে পৃথিবী ব্যাপী সব মানুষ হঠাৎ করেই এক নতুন ও পরিবর্তিত অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য ঘরের বাইরে আমাদের সহজ চলাচল বন্ধ হয়েছে।
আমরা দৈনন্দিন সব কাজ কর্ম এখন ঘরে বসেই করছি। এমন কি কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তারা বাইরে খেলা ধুলা করতে যেতে পারছে না। শপিং মল, পার্ক, রেস্টুরেন্টসহ সব বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এমন কি অসুস্থতার জন্য ডাক্তার দেখাতে হলে সরাসরি না গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অনলাইনে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মানিয়ে নিতে এবং সব কিছু মেনে নিতে আমাদের পদে পদে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে হঠাৎ আসা এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন অনেকের মাঝেই সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যা মনস্তাত্ত্বিকদের মতে একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ঠিক যেমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ শেষ হয়ে গেলেও ব্যক্তির মানসিক অবস্থার উপর তার রেশ বহু দিন রয়ে যায় অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবন যাপনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিভিন্ন মানসিক অসুবিধের সম্মুখীন হয়, তেমনি করোনা মহামারী পরবর্তী সময়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে হতে পারে বিভিন্ন মানসিক অসুবিধা।
মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, করোনা মহামারী কালীন সময়ে আমাদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং আমরা যেভাবে বাধ্য হয়েই অস্বাভাবিক অবস্থার সাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করেছি। একই ভাবে করোনা পরবর্তী জীবনে ফিরে যাবার পরেও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন মানসিক যুদ্ধ।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন সবকিছু একই রকমই থাকবে। আর এই ধারণা মনস্তাত্ত্বিকদের মতে একেবারেই ভুল। এর মূল কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন, করোনা না থাকলেও এর জন্য উৎপন্ন হওয়া মানসিক জটিলতা এক নিমিষে শেষ হয়ে যাবে না। এই সমস্যা গুলো যেমন এক দিনে শুরু হয়নি, তেমনি এক দিনে শেষও হবে না।
শিশুরা যখন পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া শুরু করবে, অভিভাবকগণ তাদের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন। পুনরায় কর্মক্ষেত্রে যোগদান করা চাকুরীজীবীরাও নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত থাকবে। অপর দিকে মাস্কসহ চলাচলের অভ্যাস ত্যাগ করে অনেকেই থাকবেন দ্বিধাগ্রস্ত। এভাবে সব কিছুর মাঝেই আমাদের মানসিক সমস্যা করোনা পরবর্তী সময়েও চলমান থাকবে।
এছাড়াও যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং সুস্থ জীবনে ফিরেছেন, তাদের মাঝে করোনা মুক্তির পরেও রয়েছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। আর এই সমস্যা গুলো সৃষ্টি হওয়ার পেছনেও রয়েছে যুক্তি সঙ্গত কারণ।
করোনা আক্রান্তরা তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার সময়টাতে যে মানসিক চাপ ও উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে যায় সেটি শারীরিক সমস্যা থেকেও বেশ জটিল আর সেটি অনেক ক্ষেত্রেই শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও থেকে যায়। করোনা মুক্ত হয়ে তথাকথিত সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পাবার পরেও করোনা ভীতি কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময়ই পার হয়ে যায়।
এভাবে সবকিছু বিবেচনা করলে বলা যায়, করোনার সমাপ্তি মানেই আবার পরিপূর্ণরূপে আগের জীবন ফিরে পাওয়া সম্পূর্ণরূপে সম্ভব নয়। সব স্বাভাবিক কিছুর মাঝেই রয়ে যাবে অনেক অস্বাভাবিক ভাবনা, আচার আচরণ এবং অনুভূতি যার রেশ রয়ে যাবে অনেকটা সময়।
প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে