করোনা পরবর্তী সুস্থতায় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব

করোনা পরবর্তী সুস্থতায় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব

গবেষণায় দেখা গেছে যে, করোনা পরবর্তী সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

করোনার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন অসুস্থ থাকা কালীন বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে তেমনি সেরে ওঠার পরেও উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, ট্রমা, ফোবিয়াসহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত রোগী ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও রোগ পরবর্তী নানা ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগে। তাই পূর্ণ রূপে সুস্থ হয়ে উঠতে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার অতীব প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই রোগ পরবর্তী পরিচর্যায় এই বিষয়টি একদমই গুরুত্ব পায় না, যা অত্যন্ত বড় একটি সমস্যা।

যখন কোন দুর্যোগ মানুষের জীবনে আঘাত হানে, তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আক্রান্ত মানুষ গুলোর জীবন বদলে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, মানব সৃষ্ট দুর্যোগ যেমন দুর্বৃত্তের হামলা বা জৈব অস্ত্রের হামলা, কিংবা জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় যেমন কোভিড-১৯ বা করোনার মতো মহামারী এই সব কিছুই মানুষকে এমন দুর্দশাগ্রস্ত করে যে অবস্থার জন্য তারা একদমই প্রস্তুত থাকে না।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত, কঠিন এবং বিপর্যস্ত অবস্থার পর পুনরায় সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা একটি বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলমান, জটিল এবং অত্যন্ত বিশিষ্ট প্রক্রিয়া। যেটির জন্য প্রয়োজন আক্রান্ত ব্যক্তিদের অসীম মানসিক দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং প্রচেষ্টা। তাই যারা করোনা মহামারী থেকে সেরে উঠছেন সেসব আক্রান্তদের করোনা পরবর্তী সুস্থ জীবনে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম এবং এক্ষেত্রে অনেক বেশী প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

বর্তমানে করোনা মহামারী সমস্ত বিশ্বব্যাপী হাহাকার সৃষ্টি করেছে। অসংখ্য মানুষ মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশী হলেও আমরা আমাদের অনেক কাছের মানুষকে এই মহামারীতে হারিয়েছি। আমরা দেখেছি তাদের অসহায় আত্মসমর্পণ।

এই গোটা চিত্রটি আমাদের সবার মাঝেই চরম ভয়, অসহায়ত্ব, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, আতঙ্ক সহ নানা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সব থেকে বড় এবং চিন্তার বিষয়টি হল, যারা আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হয়ে উঠছেন তাদের মাঝেও দীর্ঘ দিন ধরে এসব মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা রয়ে যাচ্ছে।

বিশেষত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তির ঘাটতি তাদের পথে মূল বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই বলা যায়, করোনা পরবর্তী সময়টাতে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব সব থেকে বেশী।

করোনা পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা প্রত্যেক আক্রান্তের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই একটি বিশেষ পদ্ধতি হয়তো সবার ক্ষেত্রে সমান ভাবে কাজে নাও লাগতে পারে। এ কারণে প্রতিটি ব্যক্তি যারা করোনা থেকে সেরে উঠেছে তাদের করোনা পরবর্তী জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। তাদের কি কি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে সেসব সমস্যাগুলোর দিকে দৃষ্টি রেখেই সমস্যা দূর করার প্রয়াস করতে হবে। আর তাহলেই তারা ধীরে ধীরে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।

শারীরিক সমস্যা দূর হয়ে গেলেই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ সুস্থ বলা যায় না। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হলে শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। তাই একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির করোনা পরবর্তী জীবনকে পুনরায় সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সব থেকে বেশী প্রয়োজন।

লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/thoughts-and-feelings/202107/how-mental-health-shapes-recovery-after-disaster

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

Previous articleকোপা জয়ে মানসিক প্রশান্তিতে মেসির আর্জেন্টিনা
Next articleকরোনায় আক্রান্ত বিএপি‘র সেক্রেটারি ও সাংগঠনিক সম্পাদক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here