করোনা চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসন

করোনা চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসন
করোনা চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসন

কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় সারা পৃথিবী জুড়ে নানা ধরনের মেডিসিন ব্যাবহার করা হচ্ছে। অনেক মেডিসিন পাওয়া গেছে যেগুলো কিছু না কিছু কভিড-১৯ রোগীদের উপকার করে। কিছু মেডিসিন আছে যা ভাইরাসের উপর কাজ করে। এদের এন্টিভাইরাল মেডিসিন বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই এন্টিভাইরাল মেডিসিন গুলো শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কমায় এবং কিছুটা তাড়াতাড়ি রোগীদের সুস্থ করে তোলে। কিন্তু কভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে এইসব এন্ট্রিভাইরাল মেডিসিন তেমন একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি। গবেষণায় এই প্রথম একটি মেডিসিন গুরুতর কভিড-১৯ রোগীদের উপরে ব্যাবহার করে মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে এনেছে।মেডিসিনটির নাম ডেক্সামিথাসন।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীদের উপরে ডেক্সামিথাসন দিয়ে গবেষণা করা হয়। এক গ্রুপের প্রায় দুই হাজার রোগীদের ডেক্সামিথাসন দেয়া হয়। আর আরেক গ্রুপের প্রায় চার হাজার রোগীদের ডেক্সামিথাসন ছাড়া চিকিৎসা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের ডেক্সামিথাসন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের মৃত্যুর হার যাদের ডেক্সামিথাসন দেয়া হয়নি তাদের থেকে কম। ভেন্টিলেটরের রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় এক তৃতীয়াংশ এবং যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় এক পঞ্চমাংশ কমিয়েছে ডেক্সামিথাসন। এটা নিঃসন্দেহে আশার খবর।

ডেক্সামিথাসন নামক স্টেরয়েড অনেক পুরোনো একটি মেডিসিন। বাতের রোগ সহ নানা ধরনের রোগে আমরা ডেক্সামিথাসন ব্যাবহার করে থাকি। আগেও এই মেডিসিনটি জীবন মরনের সন্ধিক্ষণে অনেক রোগীদের জীবন বাঁচিয়েছে।গুরুতর কভিড-১৯ রোগীদের শরীরে সাইটোকাইন স্ট্রম নামক একটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যা কিনা শরীরের অংগগুলোর উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডেক্সামিথাসন এই অবস্থায় শরীরের অংগগুলো অংগগুলোর ক্ষতি গুলো কমিয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এই ব্যাপারটা সহজ করে বলতে চাইলে বলা যায়, শরীরে করোনা ভাইরাসকে নিস্ক্রিয় করার জন্য শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রাসায়নিক পদার্থ গুলো অতিমাত্রায় বের হওয়ার কারনে আমাদের শরীরেরই ক্ষতি সাধন করে থাকে। আর এই ক্ষতিকর দিক গুলো কমানোর মাধ্যমে ডেক্সামিথাসন কভিড-১৯ রোগীদের উপকার করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এখন যদি করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পূর্বে অথবা ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাথে সাথে ডেক্সামিথাসন খাওয়া হয়, তবে কি হবে? তাহলে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের যে রাসায়নিক পদার্থ গুলো বের হয় তার পরিমাণ কমে যাবে। ফলে ভাইরাস আরো তীব্র ভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ ডেক্সামিথাসন কোন ভাবেই করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পূর্বে অথবা সাথে সাথে সেবন করা যাবে না। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষণায়ও এই তথ্য দেয়া হয় যে কভিড-১৯ এর মৃদু উপসর্গের রোগীদের অথবা যাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না তাদের ডেক্সামিথাসন কোন উপকারে আসবে না।

অপরদিকে যারা চিকিৎসক তারা সবাই জানে যে ডেক্সামিথাসন নামক মেডিসিনটি ব্যাবহারের আগে অনেক চিন্তা করতে হয়। কারণ, এই মেডিসিনের অনেকগুলো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির জটিলতায় এই মেডিসিন ব্যাবহারে অনেক অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। একদিকে ডেক্সামিথাসন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে শরীরের ইনফেকশন এর আশংকা বাড়ায়, অপরদিকে শরীরের গ্লুকোজ, রক্তচাপ বাড়িয়ে শরীরে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদি ডেক্সামিথাসন ব্যাবহারের ফলে Iatrogenic cushing syndrome নামক একটি জটিলতার কথা সকল চিকিৎসকদের জানা।

ঠিক সময়ে এই ডেক্সামিথাসন মেডিসিনটি ব্যাবহার করতে পারলে আমরা অনেক রোগীদের জীবন বাঁচাতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। কভিড-১৯ যাদের অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে,যাদের আই সি ইউ তে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাদের উপরে যদি শরীরের অন্যান্য প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণ রেখে ডেক্সামিথাসন ব্যাবহার করা যায় তবে ডেক্সামিথাসন আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।

সবশেষ বলতে চাই, ডেক্সামিথাসন সকল মেডিসিনেরই অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে না জেনে কোন মেডিসিন সেবন করলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায়  সর্ম্পূণই লেখকের।

Previous articleকোভিড-১৯ ঝুঁকির ক্ষেত্রে জিনগত বৈশিষ্ট্যের সম্পর্ক দেখছেন ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা
Next articleকরোনাভাইরাস বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে: ডব্লিউএইচও
এমবিবিএস, এমসিপিএস (মেডিসিন), এমআরসিপি( ইউকে), এমডি(চেস্ট)। কনসালটেন্ট - মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিভাগ, আজগর আলী হাসপাতাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here