করোনায় সামাজিকভাবেই এক ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম

0
114
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম

করোনা নিয়ে এক ধরনের কুসংস্কার চলছে? অসুস্থদের প্রতিবেশিরা ঘৃণা করছে, তার পরিবারকে হেয় করছে, মৃতদের দাফনে বাঁধা প্রদান করছে। করোনা নিয়ে মানুষের সামাজিক স্টীগমা আক্রান্ত এবং আক্রান্তদের মনে কি ধরনের প্রভাব ফেলছে কিনা? এ থেকে পরবর্তীতে কি থরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে? একইভাবে করেনা থেকে সুস্থ হওয়াদের স্বাভাভিক জীবনে ফিরতে এই কুসংস্কার কতটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে? সেসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম এর কাছে।
তিনি বলেন “করোনা নিয়ে এক ধরণের কুসংস্কার চলছে। এই ধরনের কুসংস্কারের জন্য কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে প্রকাশ করছে না। তারা জানাতে ভয় পাচ্ছে, লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে। সমাজের মানুষের কাছে হেয় হওয়ার ভয়ে, একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়ে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানলে কেউ কাছে আসবে না, চিকিৎসা হবে না ইত্যাদি ধারনাগুলো মাথায় কাজ করে। এর ফলে অন্যান্যদের করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হলে মনের মধ্যে এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করতে করে। তাদের মনে হতে পারে, তাদের কোন অপরাধের জন্য তারা মারাত্বক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের দ্বারা অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে বা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে, এই বিষয়টিও অপরাধবোধের কারণ হতে পারে।
করোনায় আক্রান্ত হলে উদ্বেগ, হতাশা, দুঃশিন্তা, প্যানিক অ্যটাক হতে পারে। যাদের আগে শ্বাস কষ্টের অল্প উপসর্গ ছিল, তাদের শ্বাস কষ্ট বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। করোনার ভয় থেকে আত্মহত্যা করেছে এমন খবরও মিডিয়ায় এসেছে। যাদের পূর্বে মানসিক রোগ ছিল, তাদের ক্ষেত্রে মানসিক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক ভাবেই এক ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোন মানসিক চাপ থেকেই মানসিক রোগ হতে পারে। কারো মানসিক রোগ ছিল কিন্তু ভালো হয়ে গিয়েছিল বা অবস্থা ভালোর দিকে ছিল তাদেরও মানসিক চাপের কারণে রোগটি পুনঃরায় প্রকাশ পেতে পারে। মানসিক চাপ থেকে মানসিক রোগ সৃষ্টি হওয়া সাধারণ ব্যাপার। করোনা পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, যাদের আগে উদ্বেগজনিত সমস্যা ছিল, তাদের উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে। যাদের বিষন্নতার সমস্যা ছিল, তাদের বিষন্নতা বেড়ে গিয়েছে। যাদের আগে প্যানিক অ্যাটাক হতো, তাদের প্যানিক অ্যাটাক বেড়ে গিয়েছে। এমনকি বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগ যেগুলো অনেকটাই ভালো হয়ে গিয়েছিল, করোনা পরিস্থিতিতে মানসিক চাপের কারণে সেগুলো বেড়ে গিয়েছে।
কুসংস্কারের প্রভাব সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যারা সুস্থ হয়েছেন, তাদের জন্যেও এই কুসংস্কার নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। তাই যারা করোনামুক্ত হয়েছেন, তাদের এই নেতিবাচক বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। অন্যদের কথায় কান না দিয়ে নিজের চলার পথ কিভাবে মসৃণ হয়, কিভাবে জীবনকে সুন্দরভাবে কাটানো যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
করোনা ভাইরাস এমন নয় যেটা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। যারা করোনামুক্ত হয়েছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। পরবর্তীতে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাই স্টিগমা থাকলেও, তা চলার পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করবে না। কারণ একটা সময় সবাই এই বিষয়ে জানতে পারবে এবং সচেতন হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমগুলো সবাইকে সচেতন করতে একটা ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে যাতে করোনায় আক্রান্ত হলে কেউ সিট্গমাটাইজড হয়ে না থাকে। প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে সচেতন করতে হবে।”

Previous articleমোবাইলে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম
Next articleকরোনাভাইরাস: আরো যেসব নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here