করোনায় চিকিৎসকদের মানসিক চাপে ভোগার সম্ভাবনা :অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম

0
63
করোনায় চিকিৎসকদের মানসিক চাপে ভোগার সম্ভাবনা :অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম
করোনায় চিকিৎসকদের মানসিক চাপে ভোগার সম্ভাবনা :অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম

ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রি সোসাইটির সমীক্ষায় দেখা গেছে করোনার কারণে ভারতে মানসিক সমস্যায় বোগার হার ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে করোনার কারণে বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কি ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে? করোনা রোগের সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এর প্রভাবে কোনো ধরনের পিটিএসডি বা মানসিক বিপর্যয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? থাকলে সেগুলি প্রতিরোধের জন্য এখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? সে বিষেয়ে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক ও খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম এর কাছে।
তিনি বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে মানসিক সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। মানুষের মনে আতঙ্ক, ভয় ও অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। কারণ করোনা ভাইরাস মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়ায় এবং এর কোন প্রতিষেধক বা কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। মৃত্যুহার ও অন্যান্য যেকোন ফ্লুর থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা- এগুলো কাজ করা হলো মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ।
যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা আইসোলেশনে আছেন তাদের পরবর্তীতে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে, অতীতের স্মৃতি বার বার মনে পড়ায় দুঃশ্চিন্তা হতে পারে। মানুষ যখন কোন বড় বিপদে পড়ে, তখন মানসিক চাপ সবাই সমানভাবে নিতে পারে না। একে অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা তীব্র মানসিক চাপ বলে। এর ফলে বিষন্নতা, উদ্বেগ, কথা এলোমেলো হয়ে যাওয়া- এ লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী বিষন্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
তাই যারা এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন অর্থাৎ চিকিৎসারত অবস্থায় বা আইসোলেশনে আছেন তাদেরকে পরবর্তীতে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। যারা বর্তমানে রেকর্ড রাখছেন তাদের থেকে তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে চিকিৎসকদের। যারা সরাসরি চিকিৎসা প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ করে যারা আই.সি.ইউ. তে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তাঁরা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি আছেন। তাঁদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা, দু:শ্চিন্তা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।চিকিৎসা পদ্ধতির ভয়াবহতা, রোগীদের কষ্ট, অসংখ্য মৃত্যুকে সামনে থেকে পর্যবেক্ষণ করা- এ ধরণের ঘটনা থেকে পি.টি.এস.ডি.(পোষ্ট ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার), আত্মহত্যা প্রবণতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
অনেকেই মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্য ও সেবা দেওয়ার চেষ্ঠা করছেন। তবে মানসিক সেবা প্রদানকারীদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কাজে দিতে পারে টেলিমেন্টাল হেল্থ সার্ভিস। সব জেলা এবং উপজেলাভিত্তিক টেলিমেন্টাল হেল্থ সার্ভিস চালু করা একটি সময়োপযোগী কাজ। টেলিমেন্টাল হেল্থ সার্ভিসের মাধ্যমে সাইকোলোজিকাল ফার্স্ট এইড সেবা প্রদান করা যেতে পারে। মানুষ ঘরে থেকেই মানসিক সাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এর ফলে সেবা প্রদানকারী এবং সেবা গ্রহণকারী উভয়ই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকবেন। তবে যারা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত আছেন, তাঁরা সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সে কাজগুলোর সাথে যুক্ত হতে পারেন। এ কাজগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থেকে পরবর্তীতে মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন এমন মানুষদের তালিকা তৈরী করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির সংকটময় অবস্থা কেটে যাওয়ার পর তালিকা অনুযায়ী তাদেরকে ফলোআপে রাখতে হবে এবং মানসিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।”

Previous articleঅটিজম শিশুদের চিকিৎসায় ভাষা বিজ্ঞানের ভূমিকা
Next articleওয়ার্ক ফ্রম হোম: মনঃসংযোগ বাড়াতে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here