করোনার নতুন স্টেইন

করোনার নতুন স্টেইন

আমাদের দেশে মার্চের শুরু থেকেই করোনার সংক্রমণ বাড়া শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে করোনা রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে। এ যেন করোনা ভাইরাসের এক ভিন্ন রুপ। গত বছরও করোনা ভাইরাসের মহামারী ছিলো। অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। অনেক মানুষ মারাও গেছে। কিন্ত এই বছরের ভাইরাসটির আচরণ গতবছরের থেকে অনেকটাই আলাদা।

গত বছরের করোনা ভাইরাসটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃদু উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। অধিকতর বয়স্ক এবং যাদের ডায়াবেটিস, কিডনীর রোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গত বছরের করোনা ভাইরাসটি জটিলতা তৈরী করেছে। কিন্ত কম বয়সের জনগোষ্ঠীতে করোনা ভাইরাসটির ভয়াবহতা ছিলো নগন্য।

তাই গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের মনে করোনা ভীতি প্রায় বিলুপ্তির পথেই ছিলো। আমরা আমাদের সাধারণ জীবনযাপনে প্রায় ফিরেই এসেছিলাম। আর বিপত্তিটা ঘটলো ঠিক সেই মুহূর্তেই। কভিড আবির্ভূত হলো এক নতুন রুপে, নতুন মাত্রায়। কভিডের যে ভয়াভয়তার কথা আমরা শুনেছি ইউরোপে, আমেরিকায় তার কিছুটা উত্তাপ আজ আমরা অনুভব করতে পারছি।

এবারের কভিড রোগীদের প্রেজেন্টেশন তীব্রতা আগের বারের থেকে বেশী। রোগীদের ভেতর কম বা বেশী বয়সের বিভেদটা কমে এসেছে। কম বয়সের জনগোষ্ঠীও এবার জটিল ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীরাই আসছেন জ্বর ঠান্ডা কাশি নিয়ে। তবে মনে হচ্ছে জ্বরের তীব্রতা গত বছরের থেকে বেড়েছে। জ্বরের সাথে থাকছে তীব্র শরীর ব্যাথা। শুকনো কাশি দিয়ে শুরু হলেও তা ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো খুব দ্রুত সময়ের মাঝেই বুকের সিটি স্ক্যানে নিউমোনিয়া পাওয়া যাচ্ছে। আর যাদের নিউমোনিয়া পাওয়া যাচ্ছে তাদের অনেকেরই অক্সিজেন এর লেভেল কমা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দরকার হচ্ছে হাসপালে ভর্তির।

ভাইরাসটির এরকম আচরণ দেখে মনে হচ্ছে গতবারের করোনা ভাইরাসের থেকে এই বছরের করোনা ভাইরাসের স্টেইন টা আলাদা।

কয়েকটি হাইপোথিসিস নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি। সেগুলো হলো ইউকে ভ্যারিয়েন্ট অথবা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট যা কিনা অন্যান্য দেশেও নতুন ভাবে মহামারী তৈরী করেছে। এই ভ্যারাইটিস গুলো অনেকটাই শক্তিশালী। যেহেতু বাংলাদেশের সাথে অন্য দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থা খোলা ছিলো তাই এইসব ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে আসার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। অপর দিকে আরেকটি সম্ভাবনাকে বাদ দিলে ভুল হবে, সেটা হলো- আমাদের বাংলাদেশেরই নতুন ভ্যারিয়েন্ট। যেহেতু প্রায় এক বছর ধরে ভাইরাসটি আমাদের দেশে আছে তাই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে, শক্তি অর্জন করে এন্টিজেনিক ড্রিফট এর মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরী করারও সম্ভাবনা রয়েছে।

আমাদের দেশের সম্মানিত সায়েন্টিস্টদের কাছে হয়তো আমরা আরো নির্ভুল তথ্য জানতে পারবো। ভ্যারিয়েন্ট যেটাই হোক না কেন এটি যে শক্তিশালী সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তাই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। গত বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে এবারের অবস্থা বিবেচনা করা উচিৎ নয়।

সবশেষে বলতে চাই, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মাস্ক, মাস্ক, মাস্ক ব্যাবহার করুন। অপ্রয়োজনীয় গণ জামায়েত পরিহার করুন। বিধাতা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখুক।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleঅধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক বিএসএমএমইউ থেকে অবসরে গেলেন
Next articleরহস্যময় মানসিক রোগ বাইপোলার হাইপোম্যানিক
ডা. রাজীব কুমার সাহা
এমবিবিএস, এমসিপিএস (মেডিসিন), এমআরসিপি( ইউকে), এমডি(চেস্ট)। কনসালটেন্ট - মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিভাগ, আজগর আলী হাসপাতাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here