পবিত্র রমজান মাস চলছে। ইবাদত এবং সংযমের এই মাসে আমাদের খাদ্যভ্যাসে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রোজা রেখে যাতে আমরা পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে পারি সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দরকার সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ।
রোজার মাসে আমরা সাধারনত তিনবার খাবার খেয়ে থাকি। তাই এই খাবার হতে হবে পুষ্টিগুণে ভরপুর ও সময়োপযোগী।
ইফতার :- সারাদিন রোজার পর প্রথম যে খাবার খাওয়া হয় তা হল ইফতার। ইফতার শুরু হতে পারে হেলদি ড্রিঙ্কস দিয়ে। লেবু পানি, তোকমার পানি, টকদই এর শরবত হতে পারে আর্দশ। চিনিছাড়া বিভিন্ন ফলের শরবত ( পাল্পসহ), স্মুদি খাওয়া যেতে পারে। বেলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে, ডাবের পানি আমাদের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখবে। স্বাস্থ্যকর এই পানীয় আমাদের দেহকে সতেজ রাখবে।
খেজুর ইফতারের প্রধান উপকরণ। খেজুর এ রয়েছে প্রচুর ক্যালরী ও ফাইবার। এতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক চিনি আমাদেরকে ইন্সট্যান্ট শক্তি দিবে।
দুধের যেকোন একটি আইটেম থাকতে পারে ইফতারিতে। দুধচিড়া, দুধ সাগু, ওটস পায়েস, পুডিং হতে পারে, এর সাথে যেকোনো ফল যোগ করে আরও পুষ্টিকর করা যায়। যাদের দুধ হজম হয় না তারা দই, পনির, ছানা করে খেতে পারেন।
ইফতারে ছোলা অতি পুষ্টিকর একটি খাবার। ছোলা দিয়ে তৈরি যেকোন একটি আইটেম কম মসলা দিয়ে রান্না করে সালাদসহ খাওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এ ভরপুর তাজা ফল ও সালাদ পূর্ণ করবে ইফতারের প্লেট।
পিয়াজু, বেগুনি, চপ, কাটলেট, রোল,কাবাব ইত্যাদি তেলে ভাজা খাবার ছাড়া বাঙ্গালির ইফতার তেমন জমে না। অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে, ডুবোতেলে না ভেজে কম তেলে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে তৈরি করতে হবে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের ইফতার না বানিয়ে একটি/দুটি আইটেম থেকে যাতে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমনঃ খিচুরি, নুডুলস,হালিম ইত্যাদি।
সারাদিন রোজার পর হঠাৎ একসাথে অনেক খাবার খাওয়া ঠিক নয়। খাবার আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খেতে হবে।
রাতের খাবার :- রাতের খাবারের মেন্যু হালকা হওয়া উচিৎ। যাতে সেহরিতে সঠিক পরিমানে খাবার গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে- চিকেন কর্ণ স্যুপ, লেনটিল স্যুপ, ডিম-সবজি স্যুপ, চিকেন নুডুলস স্যুপ, স্টু। তবে চাইলে পরিমিত পরিমানে ভাত, সবজি, মাছ/মাংস খেতে পারেন। এছাড়া ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়া যেতে পারে। রুটি+সবজি+ডাল/রুটি+সবজি+ডিম এভাবে খাওয়া যায়।
সেহেরি:- রোজায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেহরির খাবার। সেহরির খাবার সঠিক পরিমানে গ্রহণ করতে হবে যাতে সারাদিন রোজা সুস্থভাবে পালন করা যায়। ভাত অথবা রুটির সাথে পর্যাপ্ত প্রথম শ্রেণির প্রোটিন; মাছ/ মাংস/ ডিম থাকতে হবে, প্রচুর সবজি/সালাদ থাকবে যা সারাদিন দেহে শক্তি যোগাবে । নুডুলস/পাস্তা করেও অনেকে খেতে পারেন। তবে সেহরিতে খিচুরি, বিরিয়ানি, তেহারি জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। এতে করে এসিডিটির সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত লবন খাওয়া বাদ দিতে হবে। লবনাক্ত খাবার পিপাসা বাড়ায়। অনেকে সেহরিতে দুধ ভাত খেতে পছন্দ করেন তারা সাথে যেকোন ফল খেতে পারেন।
এছাড়াও, পর্যাপ্ত পানি এবং পানীয় পান করতে হবে ইফতার হতে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত।
সারাদিনের খাবার তিনবারই খাওয়া উচিত। অনেকে ইফতার বেশি খেয়ে রাতের খাবার খেতে পারেন না আবার অনেকে রাতের খাবার বেশি খেয়ে সেহরি ঠিকমত খেতে পারেন না। প্রতিবেলার খাবার পরিমাণমত হবে, কোন বেলার খাবার স্কিপ করা ঠিক হবে না।
রমজান আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত স্বরুপ। রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীর ডিটক্সিফিকেশন প্রসেসের মধ্য দিয়ে যায়। ফলে পরবর্তী সময়ের জন্য আমাদের দেহকোষ আরও শক্তিশালী ও কর্মক্রম হয়, সাথে খাবার যদি হয় সঠিক পরিমানে পুষ্টিকর তবে ইনশাল্লাহ সবাই সুস্থভাবে রোজা পালন করতে সক্ষম হব।
লেখক: মোস্তারি হায়দার, নিউট্রেশনিস্ট, সি.ডি.আই.সি, বারডেম।