করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পিটিএসডি-এর ঝুঁকি কতটুকু?

0
17
কোয়ারেন্টাইনের ও আইসোলেশন মধ্যে পার্থক্য
কোয়ারেন্টাইনের ও আইসোলেশন মধ্যে পার্থক্য

কোভিড-১৯ মহামারীটি বিশ্বজুড়ে অনেককে প্রভাবিত করছে, যারা করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক পৃথক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে। শিক্ষা এবং কাজের জন্য সারাবিশ্বে অনলাইন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। র্ধমীয় উপাসানালয় সহ পার্ক, খেলার জায়গা , অফিস, রেস্তোঁরা এবং ট্রেন স্টেশন সবই জনমানবশূণ্য।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতিকে কমানোর জন্য, সংক্রমণের মাত্রা হ্রাস করার জন্য এবং কোভিড-১৯ কে পুরোপুরি দূর করার জন্য সামাজিক দূরত্ব অত্যাবশ্যক। শারীরিক পৃথকীকরণের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও,যারা এই আইসোলেশন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, বিশেষ করে যারা সংক্রমিত হয়েছেন —তাদের উপর সূদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই তাদের প্রতি সব্বোর্চ খেয়াল রাখা দরকার।

চীনের গবেষকরা সম্প্রতি পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, কোভিড -১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেঁচে থাকাদের মধ্যে পিটিএসডি দেখা দিয়েছে কিনা। গবেষকরা আইসোলেশন অবস্থা থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন ছিল তা খতিয়ে দেখতে আগ্রহী ছিলেন। ২৭ মার্চ সাইকোলজিকাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণা পত্রটিতে উল্লেখ করা হয়েছে: “চীনের চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুসারে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদেরকে আলাদা সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বিপদ বোধ করা,অনিশ্চয়তা, শারীরিক অস্বস্তি, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, অন্যের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের ভয় এবং গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের কারণে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের একাকীত্ব,ক্রোধ,উদ্বেগ,হতাশা,অনিদ্রা এবং পোস্টট্রোম্যাটিক স্ট্রেসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

গবেষকরা কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত রোগীদেরকে, হুবাই প্রদেশের উহানে নির্মিত পাঁচটি কোয়ারেন্টাইন সুবিধা সম্পন্ন হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে একটি অনলাইন প্রশ্নাবলীতে অংশ নিতে বলেছেন। এই অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের পৃথকভাবে রাখা এবং চিকিৎসা করার জন্য। অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নাবলীতে অংশ নেওয়ার জন্য একটি মানদণ্ড পূরণ করা প্রয়োজন ছিল। যথা: প্রত্যেককেই মেডিকেল রেকর্ড দ্বারা যাচাইকৃত স্থিতিশীল প্রাপ্ত বয়স্ক কোভিড-১৯ এর রোগী হওয়া দরকার।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ৭৩০ জন রোগীর যার মধ্যে ৭১৪ জন অংশ নেওয়ার জন্য উপযোগী ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ৫০.২ বছর ছিল। “১৭-টি আইটেমের স্ব-প্রতিবেদনিত পিটিএসডি চেকলিস্ট (পিসিএল-সি) (ওয়েথার্স, লিটজ, হারমান, হুস্কা, এবং কেইন, 1993) পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেসের লক্ষণগুলোর তীব্রতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। ৫০ অথবা এর বেশি পিসিএল-সি স্কোরকে ‘উল্লেখযোগ্য পোস্টট্রোম্যাটিক স্ট্রেসের লক্ষণগুলি রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছিল।’ (এক্স. -ওয়াই. ইয়াং, ইয়াং, লিউ এন্ড ইয়াং, ২০০৭। ”

গবেষকরা পিটিএসডি চেকলিস্টের প্রশ্নাবলীর ভিত্তিতে জানতে পেরেছিলেন, কোয়ারেন্টাইন অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া রোগীদের মধ্যে মারাত্মক পিটিএসডি-র লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল এবং এর মাত্রা ছিল বিস্ময়কর (৯৬.২%)। কোভিড-১৯ এ আকান্ত হওয়া মানসিক চাপের কারণ হলেও গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে অন্যান্য অনেক কারণ ও পিটিএসডি লক্ষণ প্রকাশে অবদান রাখতে পারে যেমন নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ এবং সামাজিক বৈরিতা ।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড -১৯ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা আইসোলেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার আগেই পিটিএসডি-তে আক্রান্ত হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, একবার রোগীদের আইসোলেশন থেকে মুক্তি দেওয়া হলে কভিড -১৯ এর চিকিৎসা বন্ধ করা উচিত নয়। ভাইরাস থেকে বেঁচে ফিরে আসার পর দীর্ঘমেয়াদী মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষন ও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সকলের উপরেই মানসিকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই শারীরিকভাবে দূরুত্ব বজায় রাখলেও অন্যের সাথে সংযুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্য বার্তা, ফোন কল এবং ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে এই সময়ে লোকেরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আমাদের একে অপরের থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকার প্রয়োজন হতে পারে তবে আমরা এখনও সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/us/blog/hope-resilience/202004/are-covid-19-patients-risk-ptsd

Previous articleগৃহবন্দি অবস্থায় তরুণ ও প্রবীণদের মানসিক অবসাদ
Next articleমহামারীর সময়ে কি করবেন আর কি করবেন না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here