কখনো নায়িকা, কখনো যাদুকর মনে হয় নিজেকে

প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম ফারজানা (ছদ্মনাম)। বয়স ২১বছর। আমি আমার সমস্যাটি বলতে চাচ্ছি। আমার সমস্যা হলো আমার বাস্তববোধ শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বাস্তব চিন্তা করতে পারি না।সবসময় অবাস্তব চিন্তা করি। আমি নিজের ভেতর আলাদা একটা জগত তৈরি করেছি সেখানে আমি নিজেকে নানা জিনিস ভাবি, কখনো ফিল্মস্টার কখনো নায়িকা, কখনো যাদুকর আমি আরো ক্যারেক্টার তৈরি  করে তাদের সাথে কথা বলি।বাস্তব কোন চিন্তা বা অনুভূতি আমার মাঝে আসে না। মনে নিজেকে নানা জিনিস হিসেবে চিন্তা করে এবং মনের ভেতর তৈরি অন্য ক্যারেক্টার গুলার সাথে কথা  বলে আমার সারাদিন কেটে যায়। আমি ডাক্তার দেখিয়েছে তারা আমাকে ডিপ্রেশনে এর ঔষধ দিয়েছে কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয় নি। এর জন্য আমার পড়াশুনা, পারিবারিক জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দয়া করে কোন উপায় বলুন।
উত্তর: ধন্যবাদ, আপনার প্রশ্নের জন্য। আপনার লেখা পড়ে প্রথমেই মনে আসল ‘অর্থহীন’ এর সেই গানটার কথা। গানটির কথাগুলোই হয়তো আপনার বর্তমান অবস্থার সারাংশ হিসেবে বলা যাবে। গানটির লাইনগুলো হয়তো আপনিও জানেন- “এই যে এখন যাচ্ছে সময়, বিরক্তি আর অবহেলায়, মনটা ছেড়ে অস্থিরতা পড়ছে ঢুকে গানের খাতায়। ………. স্বপ্নপুরীর স্বপ্ন আমায়, জবাকুসুম ভাবতে শেখায়, কল্পলোকের কল্পনাতে বাস্তবতা দৌড়ে পালায়”। বাস্তবতাকে তাড়িয়ে দিয়ে কল্পনাতেই এখন আপনার বাড়ি, কল্পনাতেই সুখ। যাই হোক, সমস্যা হয়তো বুঝা গেল। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমন হয়? উত্তরে অনেক কিছুই আসতে পারে। গানটির প্রথম অংশেই তার কিছুটা আভাস দেয়া আছে। হতে পারে কোন কারণে আপনি একঘেয়েমিতে আক্রান্ত, বা বিরক্ত, বা জীবন নিয়ে হতাশাগ্রস্ত, বা যে কোন কারণে অস্থিরতায় ভুগছেন। এই সব কারণে বাস্তবতাকে মোকাবেলা করতে চাইছেন না বা করতে ভয় পাচ্ছেন, অথবা করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। আর তাই, বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে কল্পনাতে ডুবে থাকেন বা থাকার চেষ্টা করেন- যাতে বাস্তবতা আপনাকে কষ্ট না দিতে পারে। বলতে পারেন একধরণের পলায়নপর মনোভাব নিয়ে আগাচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে আপনি নিজেও হয়তো বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা, কিন্তু স্বীকার করতে বা মেনে নিতে পারছেন না। কারণ, তা করতে গেলে আত্মসম্মানে লাগে। আর তাই আরো কল্পনাতে ডুবে থেকে সব ভুলে থাকতে চান। এটা একধরণের মনের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ হতে পারে, ইংরেজিতে যাকে বলে Defence Mechanism। আবার, এটাও হতে পারে, আপনি একটু বেশী কল্পনাপ্রবণ, আপনার ব্যক্তিত্বের ধরণই এমন। এর বাইরেও আরো কিছু থাকলেও থাকতে পারে।
কি করণীয়? যদি এই অতিরিক্ত কল্পনার অভ্যাস আপনার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে তবে প্রথম করণীয় নিকটস্থ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) বা মনোবিদ (Psychologist) এর পরামর্শ নেয়া। উনি সার্বিক দিক বিবেচনা করে আপনার ঠিক কি কারণে এই সমস্যা সেটা বুঝতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। তবে, যে কারণেই হোক তা যদি মৃদু থেকে মাঝারী হয় তবে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা (Psychotherapy) নিলেই সমাধান আসবে আশা করা যায়। আর মাত্রা তীব্র হলে কিছু ঔষধেরও প্রয়োজন হতে পারে। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

Previous articleসহিংসতা দেখে বড় হলে মাদকাসক্ত হয় শিশুরা
Next articleসন্তানের বিষণ্ণতায় মায়ের শিক্ষার প্রভাব
ডা. পঞ্চানন আচার্য্য। স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম। তবে, কলেজ শিক্ষক মায়ের চাকুরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেটেছে শৈশব। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং উচ্চ-মাধ্যমিক চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পাসের পর সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। মেডিক্যালে পড়ার সময় থেকেই মনোরোগ নিয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ। তাই, ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত সময়ের চাকুরি শেষে ভর্তি হন মনোরোগবিদ্যায় এম.ডি(রেসিডেন্সি) কোর্সে। বর্তমানে তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত শিক্ষকতার ধারা বজায় রেখে চিকিৎসক ও শিক্ষক হওয়াটাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। বই, সঙ্গীত আর লেখালেখিতেই কাটে অবসর সময়ের বেশির ভাগ। স্বপ্ন দেখেন - মেধা ও মননশীলতার চর্চায় অগ্রগামী একটা বাংলাদেশের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here