ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ সবসময় মানুষের হাতে নাও থাকতে পারে। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে থাকলে ঘুম ও রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে না। ফলে ক্ষুধার অনুভূতি বাড়ে। খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়। মনে হয়, খাবার খেলে কিছুটা স্বস্তি লাগবে।
গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক চাপে পড়ে খাবারের প্রতি আসক্তি থেকেই ওজন বাড়ে। আসুন জেনে নিই, মানসিক চাপ থাকলে ওজন বাড়ার কারণ সম্পর্কে-
ক্যালরি বেড়ে যায়
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানসিক চাপের সঙ্গে ওজন বাড়ার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। গবেষণা বলছে, মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত ৩০০ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরি খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে যায় বলে গবেষণায় বেরিয়ে আসে।
হরমোন পরিবর্তন হয়
দুশ্চিন্তা ও চাপের কারণে শরীরের হরমোন পরিবর্তন হয়। ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ঘন ঘন খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। ক্ষুধা না থাকলেও তা জানান দেওয়ার ক্ষমতা তখন মস্তিষ্কের থাকে না। স্বস্তি পাওয়ার জন্য মানুষ কিছু না কিছু খায়। এভাবে ক্যালরির মাত্রা ও ওজন বাড়ে।
ফ্যাট যেভাবে জমে
অহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দেখিয়েছেন, প্রথমদিকে অতিরিক্ত মেদ দেহের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় জমে। সাধারণত দেহের নরম অংশে যেমন পেট, কোমর, গলা, ঘাড় এবং গালে ফ্যাট জন্মে।
ক্যালরি নষ্ট হয় না
প্রায়ই দেখা যায়, ওজন কমানোর জন্য সামান্য খেয়ে প্রচুর কাজ করতে চান অনেকে। কিছুদিন এই নিয়ম অনুসরণ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ওজন মোটেও কমে না, বরং অনেকের বেড়ে যায়। তখন আবার আগের নিয়মে ফিরে আসেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, দুশ্চিন্তায় থাকলে ক্যালরি দ্রুত ক্ষয় হয় না। কারণ অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ ক্যালরি ক্ষয় হতে বাধা দেয়। সুস্থ স্বাভাবিক নারীদের দুশ্চিন্তায় থাকা নারীদের চেয়ে দৈনিক অন্তত ১০৪ ক্যালরি বেশি ক্ষয় হয়। দীর্ঘদিন মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় ভুগেছেন এমন নারীদের বছরে অন্তত ৫ কেজি ওজন বেড়ে যায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ অনেকসময় জীবনকে থমকে দেয়। শারীরিক ও মানসিক বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলাই ভালো। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য যা যা করতে পারেন:
দায়িত্ব নিয়ে ভাবুন
মানুষের জীবনে অনেক খারাপ সময় আসে যখন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। পরিস্থিতি যাই হোক, সামলে নেওয়া আপনার কাজ। প্রত্যেক মানুষের কিছু দায়িত্ব থাকে। দায়িত্ব নিয়ে ভাবুন। দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। আপনার দায়িত্বগুলোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিন। তাহলে অন্যকিছু বড় সমস্যা হয়ে আপনার সামনে আসবে না।
নিজের জন্য সময় রাখুন
অনেক কাজের ভীড়ে নিজের কথা ভাবার সময় থাকে না আমাদের। এতেই সবচেয়ে বড় বিপত্তি দেখা দেয়। কাজ করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে মানুষ। একঘেয়েমি চলে আসে। নতুন উদ্যোমে কাজ করা যায় না। তাই নিজের জন্য কিছু সময় রাখা দরকার। গান শোনা, সিনেমা দেখা ও বই পড়ার জন্য সময় বের করতে হবে। পরেরদিনের কাজ আগেরদিন গুছিয়ে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে বন্ধু ও প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াও দুশ্চিন্তা কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ব্যায়াম
দেহ ও মন ভালো রাখার অন্যতম উপায় হলো ব্যায়াম করা। প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করতে না পারলে ঘরেই সেরে ফেলতে হবে। প্রতিদিন একইসময়ে ব্যায়াম করা উচিত।
শখ থাকা ভালো
দুশ্চিন্তা কমানোর অন্যতম উপায় হলো শখের কাজ করা। আপনার শখ পূরণ করার মাধ্যমে কী হবে, আর কী হবে না কিংবা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কিনা সেটা নিয়ে ভাবা উচিত না। বরং এটাই ভাবা দরকার, অন্যের ক্ষতি না করে আপনার শখ পূরণ করতে কোন অসুবিধা নেই।
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কখনও কখনও মানুষকে অসহায় করে দিতে পারে। তাই এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকা দরকার। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে