ডা. ফয়সাল রাহাত
ফেইজ বি রেসিডেন্ট, এমডি (সাইকিয়াট্রি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমইউ।
মাইগ্রেইন একটি কষ্টদায়ক স্নায়বিক রোগ, যা বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। মাইগ্রেনে সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। তবে এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ মাথাব্যথা নয়, বরং বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক উপসর্গের সমন্বয়ে গঠিত; যেমন- আলো ও শব্দে সংবেদনশীলতা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, চোখের সামনে ঝলসানো আলো বা কালো দাগ দেখতে পাওয়া ইত্যাদি।
মাইগ্রেইনের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহে অস্বাভাবিকতা ও স্নায়বিক রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে। কিছু উদ্দীপক মাইগ্রেইন বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন- মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চকলেট, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা খালি পেটে থাকা, উজ্জ্বল আলো, উচ্চ শব্দ, নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্র বা গর্ভধারণের সময় হরমোনের ওঠানামা ইত্যাদি।
উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার সাথে মাইগ্রেনের সম্পর্ক খুঁজতে চীনের বেইজিংয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০২২ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় ১৭০ জন মাইগ্রেইনে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং ৮৫ মাইগ্রেইনমুক্ত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা যথাক্রমে Zung’s Self-rating Anxiety Scale (SAS) এবং Self-rating Depression Scale (SDS) দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা মাইগ্রেইন হওয়ার ঝুঁকির সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্ত। উদ্বেগের ক্ষেত্রে আপেক্ষিক ঝুঁকির হার (odds ratio) ছিল ৫.১৮৬ (৯৫% CI) এবং বিষণ্নতার ক্ষেত্রে ৩.১৪৭ (৯৫% CI)। এ ছাড়া উদ্বেগ ও বিষণ্নতা মাইগ্রেইন রোগীদের মাথাব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি, তীব্রতা, প্রতিবন্ধকতা, জীবনযাত্রার মান এবং ঘুমের গুণগত মানের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্ত ছিল (P <০.০৫)।
অতএব দেখা যাচ্ছে, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা মাইগ্রেইন নামক এই তীব্র মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই মাইগ্রেইনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শুধু মাথাব্যথার চিকিৎসা গ্রহণই যথেষ্ট নয়, বরং তাদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা রয়েছে কি না তাও নির্ণয় করা জরুরি, তা না হলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে না।
রেফারেন্স-
আরও দেখুন-