আটতলার উপরে রাজীবরে একটি সুসজ্জিত ফ্ল্যাট রয়েছে। সঙ্গে ঝুল বারান্দা। প্রতি রাত্রেই এই বারান্দায় রাজীব তাঁর বন্ধুদের নিয়ে হইচই করেন, আড্ডা মারেন। তাঁর সব বন্ধুরাই প্রায় আসেন এবং হইচই করে সময় কাটান। কিন্তু শশী, সাজ্জাদ ও নীতু প্রত্যেকবারই কিছু না কিছু অজুহাত দিয়ে রাজীবের ফ্ল্যাটে আসতে চান না। এইভাবে কিছুদিন চলার পর রাজীব সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি নিজে গিয়ে ওই তিন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইবেন তাঁদের না আসার কারণ।
একদিন তিনি তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন এবং একথা-সেকথা বলতে বলতে আসল কথাটি জিজ্ঞাসা করেন। নীতু প্রথমে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও পরে রাজীবকে জানায় যে, খুব উঁচু কোনও জায়গায় যেতে সে খুব ভয় পায়। এই কথা শুনে রাজীব নীতুকে বলেন যে এতে নীতুর লজ্জা পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এই সমস্যাটি আসলে ফোবিয়া হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসা করালে এই সমস্যা সেরে যায়। খান্না নীতুকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, তাঁর বিল্ডিং-এ একজন পরিচিত সাইকোলজিস্ট থাকেন যাঁর সঙ্গে নীতুকে তিনি যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।
এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁদের খুব উঁচু থেকে নীচের দিকে তাকালে শরীরের মধ্যে শিরশিরানি উপলব্ধি হয়। অথবা অল্পবিস্তর মানসিক উদ্বেগ দেখা যায়। কিছু মানুষের মধ্যে এই ভয় এতটাই চরমে ওঠে এবং অযৌক্তিক হয়ে যায় যে তারা যখন খুব উঁচু বাড়ির ভিতরে থাকে, তখনও তাদের মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। এই ভয় মানুষের জীবনে এবং তার প্রাত্যহিক কাজকর্মে প্রচুর সমস্যার সৃষ্টি করে। এই ভয় থেকেই তারা খুব উঁচু বাড়িতে থাকা মানুষজনের সঙ্গে দেখা করতে চায় না, খুব উঁচুতে অবস্থিত কোনও অফিসে চাকরি করতে চায় না, প্লেনে চড়তে চায় না প্রভৃতি।
উচ্চতাজনিত ভয় বা অ্যাক্রোফোবিয়ার কয়েকটি লক্ষণ হল—
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- বমি-বমি ভাব এবং ঝিমুনি আসা
- শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার বোধ হওয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- ভয়জনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা প্যানিক অ্যাটাক
অ্যাক্রোফোবিয়ার কারণ
যেখানে মানুষের মধ্যে উঁচু জায়গা থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার একটা সাধারণ ভয় কাজ করে, সেখানে অ্যাক্রোফোবিয়ায় আক্রান্তদের এই ভয় চরমে এবং অযৌক্তিক জায়গায় পৌঁছায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনে করা হয় যে, অতীতে উঁচু কোনও জায়গা থেকে পড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের মনে উচ্চতাজনিত ভয় দেখা দেয়। এই ধরনের অভিজ্ঞতা সাধারণত ছোটবেলায় হয় আর এই ভয় সাধারণ ভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসা
সাধারণত অ্যাক্রোফোবিয়ার চিকিৎসায় থেরাপি এবং ওষুধ প্রয়োগ— দুই-ই চলে। সমস্যার গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসা হয়। মানসিক উদ্বেগের লক্ষণ দেখা দিলে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে মনের সংবেদনশীলতা ক্রমে নষ্ট বা কমতে শুরু করলে থেরাপির ব্যবহার করা হয়। এই ক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভায়রল থেরাপিই (সিবিটি) বেশি প্রযোজ্য।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে