সমস্যা: আমি সুমি আক্তার। বয়স ৩১ বছর। ঢাকায় থাকি। আমি অনেক সমস্যায় আছি কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারছি না। আমার মনে অদ্ভুত কিছু ভাবনা আসে। যেমন : কোনো কাজ করতে গেলে মনে হয় আমার হাতে জীবাণু লেগে আছে, আমি কোনো কিছুতে হাত দিলে সেই জীবাণু সেখানে লেগে যাবে। হঠাৎ এরকম চিন্তা আমার মনে আসে; আর তখন আমি বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুই। অনেকসময় দেখা যায় রান্না করার সময় এমন চিন্তা আসে তখন বারবার হাত ধুতে গিয়ে অনেক সময় চলে যায় কিন্তু আমার মনের এই বাজে চিন্তা দূর হয় না। আবার মাঝে মাঝে গোসল করার সময়ও এমন চিন্তা আসে; তখন গোসল করতেও অনেক সময় লাগে।
আবার কখনো কখনো জীবাণুর ভয়ে ধোয়া কাপড়ও আবার ধুই। এসব করতে করতে আমার সব কাজে অনেক দেরি হয়ে যায়। এসব কারণে পরিবারেও অনেক অশান্তি হচ্ছে। সবাই মনে করে আমি ইচ্ছা করেই এমন করি। আমি অনেক চেষ্টা করি এই বাজে চিন্তা মনে না আনতে; কিন্তু কোনোভাবেই আমি মন থেকে এসব চিন্তা সরাতে পারছি না। প্রায় ৬/৭ মাস হলো আমি খুব অশান্তিতে আছি। আমি কীভাবে এসব থেকে দূরে থাকতে পারি? সমাধান দিবেন আশা করি।
পরামর্শ: সুমি আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি যে কষ্টের কথা জানিয়েছেন এবং যেভাবে লিখেছেন যদি সব ঠিক হয় তবে আমরা ধরে নেব আপনি একধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আমাদের ভাষায় এ সমস্যার নাম অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার। এধরনের ডিজঅর্ডার যখন হয় তখন মানুষের মধ্যে এমন কিছু চিন্তা আসে যে চিন্তাগুলো তার বারবার মনে আসে; সে নিজে বুঝতে পারে যে চিন্তাগুলো ঠিক না এবং এসব চিন্তার কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্যতা নেই কিন্তু তারপরও সেই চিন্তাগুলো তার মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে, বার বার আসতে থাকে। যেমন : আপনি বলেছেন কোনোকিছু ধরলে আপনার মনে হচ্ছে সেটাতে জীবাণু আছে। জীবাণু নাই, আসলে জীবাণুর সংক্রমণও নেই; সেটা আপনি নিজেই বুঝতে পারেন কিন্তু মন থেকে ভাবনাটা দূর করতে পারেন না। এটার কারণে বাধ্য হয়ে হাত ধৌত করছেন বারবার। এ হাত ধৌত করতে গিয়ে আপনার অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে, সময়ের অপচয় হচ্ছে, অনেক শ্রমের অপচয় হচ্ছে , কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে ; আপনার মনের মধ্যে এক ধরনের অশান্তি বিরাজ করছে এবং শেষ পর্যন্ত মন থেকে এটা দূর হচ্ছে না, একটার পর একটা ভাবনা চলতেই থাকে আপনার মনে। এভাবে যখন মানুষের মনে কোনো চিন্তা বিরাজ করে-সে নিজে বুঝতে পারে এটা ঠিক না তারপরও এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না এবং এটা তার মানসিক কষ্টের কারণ হয়; এতে তার পরিবার ভুক্তভোগী হয়, সে নিজে ভুক্তভোগী হয়। তখন আমরা এটাকে বলি অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার। এটা একধরনের মানসিক সমস্যা। এটার চিকিৎসা আছে ।
আর একটা বিষয় হলো আপনার এ সমস্যাটা পরিবারের লোকজন অনেক সময় বুঝতে পারে না। তারা অনেক সময় ভুল বোঝে, তারা মনে করে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো করছেন। আসলে তারা বুঝতে পারে না বলেই এগুলো বলে। এর কারণ হলো শারীরিক সমস্যা হলে মানুষ বুঝতে পারে-শরীরে জ্বর হলে গায়ে হাত দিলেই জ্বর বোঝা যায় অথবা থার্মোমিটার দিয়ে মাপা যায়। কিন্তু মনের সমস্যা হলে তা বোঝা যায় না। রোগী যদি বলে সে কষ্ট পাচ্ছে, তার কষ্ট শুধু সে বুঝতে পারবে; অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। কিন্তু অন্যদেরকে বুঝতে হবে সে যে পার্সনালিটির, যে মন মানসিকতা নিয়ে চলে তার হঠাৎ করে এধরনের অমূলক কথা বলা তো শোভা পায় না; সুতরাং রোগী যা বলে সেই কথাকে বিশ্বাস করতে হবে। তাকে সান্ত্বনা দিতে হবে, তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। যেকোনোভাবে হোক তাকে অবহেলা করা যাবে না। এটা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার এবং এধরনের রোগের চিকিৎসা আছে।
আপনি প্রয়োজনে একজন মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। আপনার আনুষঙ্গিক আরো কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোও তাঁকে জানান। আমার মনে হয়, একজন মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসা এবং সাইকো থেরাপির মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা
থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পাবেন।