আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের মানসিক উন্নতিতে করনীয়

0
170
আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের মানসিক উন্নতিতে করনীয়
আত্মহত্যা নামক সামাজিক সমস্যার মূল কারণ মানসিক অসন্তোষ। যখন একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার উপায় খুঁজে না পায় তখনই সে আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়।

আর যারা আত্মহত্যার মতো এমন চরম পদক্ষেপ নেবার পর পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রয়াস করে তাদের মানসিক ভাবে সুস্থ রাখা হয়ে পড়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জ।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, যারা আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরেন তাদের পরবর্তীতে যে সব মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলি নিয়ে খুব বেশী গবেষণা হয়নি। তবে যে সব গবেষণা করা হয়েছে সেগুলো বিবেচনা করলে এটা স্পষ্ট ভাবেই বলা যায় আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা পরবর্তী জীবনে একজন ব্যক্তি তীব্র মানসিক সমস্যায় ভোগেন এবং এ সময়ে যদি তার শারীরিক ও মানসিক উন্নতি নিশ্চিত করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে তার মাঝে আরও জতিল মানসিক রোগ সৃষ্টি হতে পারে যা তার স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য চরম অন্তরায় হয়ে ওঠে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক সুখী মানুষ জীবনে পূর্ণতা পেতে চান, হাশি খুশি থাকতে চান এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা চান। তাই যারা এগুলোর অভাবে মৃত্যুর অনেক কাছে পৌঁছে গেছিলেন তাদের জীবনকে পুনঃনির্মাণ করতে এই বিষয়গুলির দিকেই বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।

১) একজন আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তি চরম বিষণ্ণতায় ভোগেন। গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ১০% এরও বেশী সার্ভাইভারদের মাঝে এ ধরণের তীব্র মানসিক সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া, অস্থিরতা, ভীতি ইত্যাদি সমস্যা তার মাঝে তীব্র মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই সামাজিক ও ব্যক্তিগত ভাবে তার পাশে দাঁড়িয়ে তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করাই এ সময়ের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ধরণের মানসিক জটিলতা গুলির অবসান না হলে তার মাঝে এ ধরণের আত্যহত্যা প্রবণতা পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

২) একজন আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তি তার স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। তাকে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে ফেরাতে তাই তার দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার প্রয়াস করতে হবে। ধীরে ধীরে তার মাঝে এই আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে এবং আশ্বস্ত করতে হবে যে সে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম এবং তার সাথে সমাজের অন্যান্য কারও কোন দূরত্ব বা পার্থক্য নেই।

৩) এছাড়াও এক জন আত্যহত্যার প্রয়াস করা ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতে আর কখনো এমন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে সেদিকেও অন্যান্যদের মনযোগী হতে হবে। এই লক্ষ্যে আত্মহত্যার নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে তাকে আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত কাজের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে আত্মহত্যা কখনোই কোন কিছুর সমাধান হতে পারেনা।

একজন মানুষকে শুধু শারীরিক ভাবেই নয় বরং মানসিকভাবেও সুস্থ থাকাটা জরুরী। একজন মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি কখনোই আত্মহত্যার মতো কাজের প্রতি উৎসাহিত হবে না। আর এটাই হবে একজন আত্মহত্যা থেকে সার্ভাইভ করা ব্যক্তির প্রতি আমাদের মূল কর্তব্য।  তার মানসিক সমস্যাগুলি নিরসন করে তাকে শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই সুস্থতা প্রদানের প্রয়াস করতে হবে। তাহলেই সে সব ট্রমা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে অন্যান্যদের মতো করেই সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/curious/202102/how-can-we-optimize-the-lives-suicide-survivors

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleগর্ভাবস্থায় নারীর নিদ্রাহীনতা
Next articleকরোনা আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: আমাদের করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here