আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার সতেরো বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সতেরো বছরে আত্মহত্যার হার এবং পরিস্থিতি কী দাঁড়িয়েছে তার চিত্র উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বলা যায়, এক লাখ আমেরিকানের মধ্যে ১৬ জন আত্মহত্যা করছেন। ২০১৬ সালে প্রায় ৪৫ হাজার আমেরিকান আত্মহত্যা করেছেন। সব বয়সের নারী-পুরুষ, সব গোষ্ঠী ও নৃগোষ্ঠীর মধ্যেই আত্মহত্যার হার বেড়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে জড়িত অন্যতম একজন গবেষক ড. ডেবোরা স্টোন, তাদের গবেষণায় অনেকটা সময় ধরে তারা আত্মহত্যা বৃদ্ধির হার অনুসরণ করেছেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোতে পরিস্থিতি কী, সেটাও তুলে এনেছি আমাদের গবেষণায়। ২৫টি রাজ্যে আত্মহত্যার হার ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এটি আমাদের গবেষণায় নতুন আবিষ্কার বলা যায়।
আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির পেছনে একক কোন কারণ নেই বলে গবেষকরা বলছেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক রকম বিষয় কাজ করে আত্মহত্যা করার ক্ষেত্রে। তবে গবেষক স্টোন বলেছেন, বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়গুলো ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে তারা বড় কারণ হিসেবে পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের অঙ্গরাজ্য, যেগুলোতে এখনও গ্রামীণ পরিবেশ রয়েছে, সেখানে অতীতের মতো এখনও আত্মহত্যার হার বেড়ে চলছে। এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক সমস্যা আছে। আর এগুলোতে বসবাসকারী মানুষ এখনও অনেকটা একঘরে হয়ে রয়েছে।
সিডিসি গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার ৫৪ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতার কোন বিষয় ছিল না। ন্যাশনাল এ্যাকশন এ্যালায়েন্স ফর সুইসাইড প্রিভেনশন এর ড. জেরি রিদ বলেছেন, গুরুতর অসুস্থতা ও আত্মঘাতী আচরণের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। তবে মানসিক অসুস্থতাই একমাত্র কারণ নয়। অর্থনৈতিক অবস্থার পরিণতি ও জীবনধারণের অবনতির সুযোগ মানুষকে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে ফেলে।
আরেক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিরেল বলেছেন, অনেক মানুষের যাদের মানসিক অসুস্থতা চিহ্নিত হয়েছে তারা কিন্তু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়নি। এটা সরলিকরণ করা যাবে না যে, মানসিক অসুস্থতার কারণেই আত্মহত্যা করছে। বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দেয়া বা তাদের সচেতন করার কর্মসূচী গ্রহণ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। মানুষ কোন জটিল সমস্যায় পড়লে কীভাবে তা সামাল দেয়া যায় অথবা আবেগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এসব প্রশ্নে শিক্ষা কর্মসূচী নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ড. রিদ বলেছেন, কীভাবে পড়তে হবে বা লিখতে হবে, এসব আমরা শিক্ষা নেই। সেখানে মানুষকে তার নিজের সঙ্কট সামাল দেয়ার শিক্ষা আমরা অবশ্যই দিতে পারি।
সূত্র: বিবিসি।

Previous articleএকাকিত্ব রোগবালাই বাড়ায়
Next articleবয়ঃসন্ধি-কালে মানসিক সুস্থতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here