অলসতা মানসিক রোগের কারণ? নাকি উপসর্গ?

0
7
অলসতা মানসিক রোগের কারণ? নাকি উপসর্গ?

ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার সরদার
রেসিডেন্ট, ফেজ বি,
মনোরোগবিদ্যাবিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

অলসতা: মানসিক রোগের লক্ষণ না উপসর্গ?

অলসতা হল একটি অনুভূতি যা প্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনো না কখনো দেখা দেয়। প্রত্যেক  মানুষ তার জীবদ্দশায় কোন না কোন সময় বা অনেক সময়ই এটি অনুভব করে থাকেন।একজন সাধারন মানুষ মাঝে মধ্যে অলসতা বা ক্লান্তিবোধ করতেই পারেন । কিন্তু সেটি যদি হয় দীর্ঘমেয়াদী বা অতিরিক্ত তাহলে এটি আমাদের এক  ধরনের শারীরিক এবং মানসিক অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে অমনোযোগী ও নিষ্ক্রিয় করে তোলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অলসতা কি শুধুমাত্র একটি অনুভূতি, নাকি এটি মানসিক রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ হতে পারে?

অলসতা কী?

অলসতা মূলত শারীরিক বা মানসিক কোনো কাজের প্রতি অনীহা। এটি একটি সময়কালীন অনুভূতি হতে পারে, যেখানে ব্যক্তি কোনো কিছু করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা অনীহা জন্মায় । এই অবস্থায় মানুষ সাধারণত  উদ্যমহীন হয়ে পড়ে। অলসতা কখনো কখনো  অতিরিক্ত চাপের ফলস্বরূপ হতে পারে, আবার কখনো এটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক সমস্যা বা রোগের লক্ষণও হতে পারে।Magazine site ads

ডিপ্রেশন বা বিসন্নতা

ডিপ্রেশনের অন্যতম প্রধান উপসর্গ সহজে ক্লান্তি বা অলসতা। যখন মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়, তখন তার মধ্যে শারীরিক বা মানসিক কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে যায়। এমনকি দৈনন্দিন কাজকর্ম, শখ বা আগ্রহের বিষয়গুলোও তার কাছে আকর্ষণহীন মনে হয়। ডিপ্রেশন আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অলসতা শুধু একটি অনুভূতি নয়, এটি রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।

অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগজনিত রোগ

অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগও অলসতার কারণ হতে পারে। উদ্বেগের ফলে মানুষের মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে শারীরিক বা মানসিক কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি চিন্তা বা উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে, সে মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল বা অলস অনুভব করতে পারে।

অন্যান্য মানসিক রোগ

এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক মানসিক রোগ এর উপসর্গ হতে পারে অলসতা। আবার দীর্ঘমেয়াদী অলসতা বা অকর্মণ্য জীবনযাপন হতে পারে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক রোগের কারণ ।

অলসতার অন্যান্য কারণ

অলসতা কেবল মানসিক রোগের উপসর্গ নয়, এটি শারীরিক অসুস্থতার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। শরীরে কোনো গুরুতর অসুখ, যেমন কিডনি রোগ, হৃদরোগ, বা থাইরয়েড সমস্যাও অলসতার কারণ হতে পারে। এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অপুষ্টি, বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের ফলেও অলসতা দেখা দিতে পারে।মনের খবর ম্যগাজিনে

অলসতা দূর করার উপায়

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: ভালো ঘুম এবং বিশ্রামের গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। শরীরের পুনরুজ্জীবিত হতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম অপরিহার্য।

২. ব্যায়াম এবং শারীরিক ক্রিয়া: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম অলসতা কাটাতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

৩. সঠিক খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং অলসতা দূর করতে সহায়ক হয়।

৪. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যদি অলসতা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মানসিক সমস্যা হিসাবে প্রকাশ পায়, তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার

অলসতা একদিকে যেখানে একটি সাধারণ অনুভূতি হতে পারে, সেখানে অন্যদিকে এটি বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যার লক্ষণ বা উপসর্গও হতে পারে। তাই অলসতা যদি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর রূপ নেয়, তবে তা নিছক অবহেলা না করে, চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। অলসতা কাটিয়ে উঠতে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন-

Previous articleআমি মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট নই, বরং ছেলেদের প্রতি সেক্সুয়ালি আকর্ষণ অনুভব করি
Next articleবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here