অলসতা নাকি বিষণ্ণতা?

অলসতা নাকি বিষণ্ণতা?
কাজে ঢিলেমি বা অলসতা হতে পারে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগের লক্ষণ। তাই একে একদম হেলাফেলা করা উচিৎ নয়।

আমাদের সমাজে এই ধারণাটি বেশ প্রচলিত যে, যে ব্যাক্তি কাজ ফেলে রাখে, কাজে ধীর গতি সম্পন্ন, সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বের সাথে কোন কাজ করেনা বা করতে চায় না। এমন অলস ব্যক্তিকে সবাই অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর পেছনে আর কোন জটিল কারণ আছে কিনা সেটি নিয়ে কেউ ভাবতে চায়না। এই প্রচলিত ধারণা থেকেই আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যে কোন কাজের পেছনে অনুপ্রেরণা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আর এই অলসতা বা কাজে অনুপ্রেরণা না থাকার পেছনে বিভিন্ন মানসিক উৎপীড়ন যেমন, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ ইত্যাদি কারণ থাকতে পারে। এই অলসতা দূর করতে এবং একই সাথে মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই এই সমস্যাগুলির নিবারণ করা প্রয়োজন। তাই সর্ব প্রথম অলসতা এবং বিষণ্ণতার কারণে হওয়া অলসতা এই দুটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

অলসতা এবং বিষণ্ণতার মাঝে বেশ অনেকটাই মিল রয়েছে। যে কারণে অনেকেই বিষণ্ণতাকে অলসতা বলে ভুল করে। বিষণ্ণতা এবং অলসতা উভয়ই আমাদের মনের অনুপ্রেরণামূলক মনোভাবকে প্রভাবিত করে এবং এটি আমাদের কাজকর্মে প্রভাব বিস্তার করে। বিষণ্ণতা এবং অলসতার মাঝে মূল যে পার্থক্যটি রয়েছে সেটি হল, বিষণ্ণতা সরাসরি ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোভাবের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর অলস ব্যক্তিরা সাধারণত কোন কিছুই মনোযোগের সাথে প্রচেষ্টা সহকারে করেনা বা তাদের মাঝে আত্ম সচেতনতা মূলক অনুভব কম থাকে।

একজন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি সব সময়ই মন মরা হয়ে থাকে। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সব সময়ই তাকে অনুৎসাহী মনে হয়।  তার মাঝে সব সময়ই ইচ্ছের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এটা এ কারণে নয় যে বিশেষ বিশেষ পছন্দের কাজ ছাড়া অন্য কাজে সে আগ্রহ প্রকাশ করছেনা, বরং এটি এমন যে, তাকে সব সময়ই দুঃখী, একাকী এবং হতাশ বলে মনে হয়। অপর দিকে একজন অলস ব্যক্তি বিশেষ বিশেষ সময়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এক্ষেত্রে তার পছন্দ অপছন্দ বা আগ্রহ অনাগ্রহ বেশ প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

আলোচ্য দুটি বিষয়ই আমাদের জীবনের অংশ। তবে বিষণ্ণতা যেহেতু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা যেন একজন বিছন্নতায় ভোগা ব্যক্তিকে অলস বলে তার মানসিক চাপ আরও না বাড়িয়ে দেই। এক্ষেত্রে তার অবশ্যই আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন যেন মানসিক সমস্যাগুলির সমাধান করা যায় এবং বিষণ্ণতা দূর হয়।

যে কোন কথা বলার আগে, কিংবা ভাবার আগে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের অনুভবকে কাজে লাগানো উচিৎ। এভাবে ভাবতে পারলে আমরা অলসতা এবং বিষণ্ণতা-দুটি বিষয়কে অবশ্যই আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করতে পারবো। এবং সবার জন্য মানসিক ভাবে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারবো।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleআক্রমণাত্মক মানসিক রোগী নিয়ন্ত্রণে পরিবারের ভূমিকা
Next articleকরোনাকালে গাছের পরিচর্যা করলে মানসিক চাপ কমবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here