অনুতাপের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ৫টি উপায়

আমরা প্রায়ই বিভিন্ন সময় ছোট বা বড় বিষয়ে অনুতাপ করি। এই অনুতাপ এমন কোনো আবেগ না, যা দেখে আমাদের ভয় পেতে হবে। সমাজের অনুতাপের সঙ্গে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে চলবেন তার কিছু কৌশল নিয়েই আজকের আলোচনা।
১. ‘আমি আর কখনোই এমনটা করবো না’ এই চিন্তা থেকে নিজেকে বের করতে হতে হবে। যখন আমরা কোনো বিষয় নিয়ে অনুতাপ করি, তখন আমাদের এই অনুভূতিটা কোনো একটা কিছু প্রথমবার না করতে পারার জন্য হয় না। বরং নিজেদের স্ব-আঘাত করার ফলে নিজেকে বার বার জড়িয়ে ফেলার জন্য হয়।
আপনি হয়তো সারারাত সামাজিক যোগাযোগে রাত কাটিয়ে সকালে অফিসে যেতে দেরী করে ফেলেন। আপনি তখন ভাবেন যে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলেই হতো কিংবা দীর্ঘ সময় না খেয়ে ক্ষুধা জমিয়ে একসঙ্গে ৩/৪ প্যাকেট চিপস খেয়ে ফেলেন এবং পরবর্তীতে তা নিয়ে আপনার অনুতাপ হয়।
আপনি যদি এই ধরণের কাজ এর আগেও অনেকবার করে থাকেন, তার মানে এই কাজগুলো এরপরও করবেন। এবং করতেই থাকবেন। বরং এই অভ্যাস ও আত্মনিয়ন্ত্রনের অক্ষমতা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য কিছু কৌশল আয়ত্ত্ব করাটাই হবে অধিক কার্যকরী।
২. অনেকেই ‘আমার কোনো অনুতাপ নেই’ এই কথাটা বলতে পছন্দ করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথাটা সত্য নয়। যেকোনো নেতিবাচক অনুভূতির মত অনুতাপের সাথেও আমাদের মানসিক ভাবে মানিয়ে চলতে হবে।
যখন আপনি আপনার অনুতাপ হওয়ার অনুভূতিটিকে অস্বীকার করার বদলে স্বীকার করবেন, তখন এর সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য কৌশল নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন। আবার আপনি কি অনুভব করছেন তা নির্দিষ্ট করে ফেললে আরো সুবিধা হয়। যেমন ‘আমার অনুতাপ হচ্ছে’ বলাটা ‘আমার খারাপ লাগছে’ বলার চেয়ে অধিক শ্রেয়।
যখন আপনি খুব বড় বিষয় নিয়ে অনুতাপ করেন (যেমন- একটা খারাপ সম্পর্কে থাকা, নিজের সন্তানরা ছোট থাকার সময় তাদের সময় না দেওয়া বা অবসর নেয়ার পর কি করবেন তা নিয়ে আগে ভাগেই চিন্তা না করা ইত্যাদি) তখন মনে রাখার চেষ্টা করলে খুব ভাল হয় যে, অনুতাপ একটা সর্বজনীন আবেগ। আমরা কেউই নিখুঁত নই। তাই, সবসময় সব ঘটনা থেকে ভাল কিছু খুঁজে না পেলেও চলবে।
৩. আপনার বেড়ে ওঠার ক্ষমতায় আস্থা রাখুন। অনুতাপ আপনাকে প্রচন্ড পরিমাণে দ্বিধাগ্রস্ত এবং এড়িয়ে চলা স্বভাবের করে ফেলতে পারে। কোনো সম্পর্কের বিষয়ে অনুতাপ আপনাকে করে তুলতে পারে সকল ধরনের সম্পর্ক বিমুখ। অথবা আপনার কোনো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত যা কিনা আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, আপনাকে এ ব্যাপারে যে কোনো ঝুঁকি বিমুখ করে তুলতে পারে। শুধুমাত্র আপনি কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার মানে এই না যে আপনি এই পুরো ব্যাপারটাতেই বার বার হারের সম্মুখীন হবেন।
৪. আপনি যেভাবে চিন্তা করেন তার মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারলে একই ভুল বার বার করার প্রবণতা কমে যায়। যেমন আপনি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে পারেন না। সেক্ষেত্রে আপনি নিজেকে রাতে আগে ঘুমাতে যাওয়াটা এক ধরণের উপহার হিসেবে ভাবতে পারেন। হ্যাঁ, সারারাত জেগে সামাজিক মাধ্যমে ঘাটাঘাটি করা হয়তো অনেক আকর্ষণীয় লাগে। কিন্তু রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়ার সুবিধাগুলোকে পুরষ্কার হিসেবে গণ্য করলে আমাদের এই অভ্যাসটা আয়ত্ত করা সহজ হবে। হয়তো এটা পুরোপুরি বদলে দিবে না আপনাকে কিন্তু এর মাধ্যমে আপনি আপনার আচরণে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে পারবেন।
৫. ঠিকভাবে অনুতাপকে সামাল দেয়ার জন্য ভারসাম্য পূর্ণ আচরণ করতে হবে। বাজে ঘটনাগুলো রোমন্থন করা ঠিক না। কিন্তু একই সেই ঘটনাগুলো চাপিয়ে রাখালেও তা কাজে দিবে না। একেকটি ঘটনার ক্ষেত্রে একেক রকম সময় লাগে সেই ঘটনার সাথে খাপখাইয়ে নিতে।
যেমন ধরা যাক, আপনি দেশের বাইরে যাবেন বিমানে করে। কিন্তু আপনার খেয়াল ছিল না পাসপোর্ট সাথে নিয়েছেন কিনা তা দেখে নিতে। বিমান বন্দর গিয়ে আপনি দেখলেন যে আপনি তা নিয়ে আসেননি। এই ঘটনার জন্য আপনার তখন অনুতাপ হবে। কিন্তু তা সাময়িক। এবং আপনার এর সাথে খাপ খাওয়াতে খুব বেশি সময় দিতে হবে না।
কিন্তু মনে করুন আপনি আপনার বাসায় নতুন রঙ করালেন, কিন্তু রঙ করার পর আপনার আর সেই রঙ টা পছন্দ হল না। এরকম ক্ষেত্রে অনুতাপের পরিমাণ বেশি স্থায়ী হয়। একে সমন্বয় করতে আপনাকে দীর্ঘ সময় দিতে হবে।
দুটো উদাহরণের ক্ষেত্রেই মূল কথা হচ্ছে, আপনার অনুভূতিকে পুরোপুরি ভাবে নিবিষ্ট হতে দেয়ার জন্য সময় দিতে হবে। না হলে তা হুট হাট আপনাকে খুঁচিয়ে বেড়াবে।
সর্বোপরি বলা যায়, আপনি যদি আপনার আবেগকে নিজের উপর ছেড়ে দেন মানিয়ে নিতে, তাহলে তা অধিক কার্যকরী হবে। অনুভূতি কে স্বীকার বা প্রকাশ না করে থাকলে তা আরো বেশি ক্ষতি করে।
সাইকোলজি টুডে থেকে অনুবাদটি করেছেন- মাঈশা তাহসিন অর্থী

Previous articleপ্রিয় মানুষটি মিথ্যে বললে বুঝবেন যেভাবে
Next articleশিশু শিক্ষা: আগে মানসিক বিকাশ না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here