অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষণ্নতা কমাতে কার্যকরী

এটি একটি অসুখ ছিল যা প্রায় ওর জীবন নিয়ে নিয়েছিল, এমন অনেকদিন গেছে যখন যে বাসা থেকে বের হয় নি এমনকি বিছানা থেকে উঠেনি। কিন্তু কিছু বছর পর ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শান্নাই পিয়ারস কোন সাহায্য নিতে অনেক ভয় পেত।
মিস পিয়ারস বলেন, “আমি ভীতু ছিলাম, আমার জীবন একটি বাক্সবন্দী জীবনে পরিণত হত, আমার উপর সারাজীবনের জন্য হাবা অথবা মেরুদন্ডহীনের লেবেল লেগে যেত। আর এটাই হত আমার জীবন”। মিস পিয়ারস আরো বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ গুলোই এমন যে তখন কারোর সাহায্য নিতে ইচ্ছ করে না, লক্ষণগুলো কারোর সাহায্য নিতে বাধা দেয়”।
মিস পিয়ারস এর মত অস্ট্রেলিয়ায় ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রত্যেক ১৩ জনের মধ্যে ১ জন ভয়ংকর বিষণ্নতায় ভোগে। শতকতা ৭০ ভাগেরও বেশি মানুষ যারা বিষণ্নতায় ভোগে তারা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের দ্বারস্থ হয় না। এটি একটি বিষয় যা অস্ট্রেলিয়ায় আত্মহত্যার পরিমাণ দিন দিন বাড়াচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে মানুষের যে ধারণা, মানসিক স্বাস্থের চিকিৎসায় যে খরচ, ডাক্তার অথবা বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎ পেতে যে সমস্যা হয় এগুলোই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে।
তখন মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাবগুলো জীবনে অনেক বড় অবদান রাখে। এখন অনলাইনে মনস্তাত্বিক থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। যা বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা এবং এসব থেরাপি বিষণ্নতা দূর করতে খুব ভাল কাজ করে।
আন্তর্জাতিক মেটা বিশ্লেষণ যা জেএএমএ সাইক্রিয়াট্রি তে প্রকাশিত হয়, সেখানে ডজনেরও বেশি ট্রায়ালে ৩৯০০ জনের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা সেখানে অনলাইন জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপির ব্যবহার করেন। এই থেরাপিতে খরচ কম হয়, যে কেউ এই থেরাপি নিতে পারবে এবং সারাবিশ্বের সব মানুষের জন্য এই থেরাপি উন্মুক্ত। প্রবেশাধিকারে কোনো বাধা নেই।
ব্ল্যাক ডগ ইন্সটিটিউট এর পরিচালক এবং এই বিশ্লষণটির একজন লেখক অধ্যাপক হেলেন ক্রিস্টেন্সেন বলেন, “আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা অবহেলা করা যাবে না। আমাদের সরকার এবং ক্লিনিকাল বিশেষজ্ঞদের জরুরি ভিত্তিতে এই ধরনের প্রোগ্রামের সুপারিশ করা উচিৎ এবং যারা সমস্যায় ভুগছে তাদের ঠিক এই ধরনের সমর্থন দেয়া উচিৎ, সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দেয়া উচিৎ”। তিনি আরো বলেন, “মানুষ মনে করে ভাল ফলাফলের জন্য সরাসরি দেখা করা উচিৎ। এই গবেষণাটি একদম পরিষ্কারভাবে আমাদের দেখাচ্ছে সরাসরি দেখা করা তেমন জরুরি কিছু না। অনলাইন সাইকোলজিক্যাল থেরাপি বিষণ্নতা এবং উদ্বিগ্নতায় ভোগা মানুষের জন্য সরাসরি দেখা করার চেয়ে বেশি কার্যকর”।
মিস পিয়ারস ১৪ বছর বয়সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করার পর ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। তিনি পড়ে আর ডাক্তারের কাছে যান নি তার বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করান। বর্তমানে তিনি বাইটব্যাক চালাচ্ছেন, যা ব্ল্যাক ডগ এর অনলাইন ওয়েবসাইট। যেসব তরুণ তরুণীরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে তারা তাদের অভিজ্ঞতা জানায় এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে থাকে।
মিস পিয়ারস বলেন, “আমি সুস্থ হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলাম কিন্তু সরাসরি কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে সেবা নিতে আমি খুব ই ভয় পাচ্ছিলাম। মাই কম্পাস নামে একটি অনলাইন সাহায্য সংস্থা আমাকে আমার উদ্বিগ্নতা দূর করতে সাহায্য করে। যা আমাকে পরে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে সহায়তা করেছিল। যারা সরাসরি স্বাস্থ্য সেবা নিতে চায় না তাদের জন্য এটি যে কোনো ধরনের সেবা নেয়ার জন্য খুবই ভাল পদ্ধতি”।
অধ্যাপক ক্রিস্টেন্সেন বলেন, “এই ধরনের ই মেন্টাল হেলথ কেয়ার প্রোগ্রাম খুব ভাল ভাবে পরীক্ষিত যে এ ধরনের প্রোগ্রাম বিষণ্নতা এবং উদ্বিগ্নতা কমাতে অনেক সাহায্য করে”।
তথ্যসূত্র- সানডে মর্নিং হেরাল্ড
(http://www.smh.com.au/nsw/online-mental-health-treatments-are-proven-to-reduce-depression-20170322-gv4fv8.html)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous article“মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে রাষ্ট্রের আরো অর্থ বিনিয়োগ চাই” আইনজীবিদের আবেদন
Next articleদীর্ঘ ৬ বছর ধরে আমি মাদকাসক্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here