আত্মবিশ্বাস জীবনে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলায় বিশেষভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু মাত্রাধিক্য আত্মবিশ্বাস নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অতি আত্মবিশ্বাস কথাটি অনেকের কাছেই বেশ অস্পষ্ট হতে পারে। আসুন প্রথমে এই বিষয়টি নিয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা নেওয়া যাক। আত্মবিশ্বাস হল সর্বাত্মক ভাবে ইতিবাচক একটি মনোভাব। তাহলে কিভাবে এটি দ্বারা খারাপ কিছু ঘটতে পারে?
আমরা জানি যে, যে কোন কিছুর অতি মাত্রা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনেনা। ধরুন, জীবন রক্ষাকারী যে ওষুধ আমাদের বদ হজম দূর করে, সেই ওষুধের অতি মাত্রায় সেবনই কিন্তু আমাদের অসুস্থ করে দিতে পারে। আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক একই রকম। এর অতিমাত্রা নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসে।
আত্মবিশ্বাস অতি বা চরম মাত্রায় পৌঁছালে অথবা কোন বিষয়ে অত্যাধিক আত্মবিশ্বাস বা ইতিবাচক মনোভাব আমাদের মধ্যে থাকা অনুপ্রেরণাকে নষ্ট করে দেয়। ফলে আমাদের মাঝে সচেতনতা কমে যায়। আর অনুপ্রেরণা এবং সচেতনতা ছাড়া জীবনে স্বাস্থ্যকর এবং ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।
ধরুন, কোন একটি সম্পর্কে একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে তার সঙ্গীর বিভিন্ন নেতিবাচক আচার আচরণ এবং মনোভাবকে বিনা বাক্যে মেনে নিতে পারে। এটা ভেবে মেনে নেয় যে এই সমস্যা এক সময় ঠিক হয়ে যাবে এবং দিনের পর দিন কোন পরিবর্তন ছাড়া এভাবেই মানসিক পীড়ার মাঝে জীবন অতিবাহিত করবে।
এখানে ব্যক্তির মানসিক পীড়ার মূল কারণ তার সঙ্গীর নেতিবাচক আচার আচরণ বা মনোভাব নয় বরং ব্যক্তির নিজের অতি মাত্রার আত্মবিশ্বাস। যা তাকে অবস্থা পরিবর্তনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাঁধা প্রদান করছে এবং এক্ষেত্রে তার সচেতনতাও লোপ পেয়েছে। যা তাকে অবস্থাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে অপারগ করে তুলেছে। ফলশ্রুতিতে মানসিক পীড়ার কোন সমাধান আসেনি।
অতি মাত্রার আত্মবিশ্বাস ব্যক্তিকে আসন্ন বিপদ আপদ বা সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতেও বাঁধা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের সামর্থ্য এবং সক্ষমতা নিয়ে এই ভ্রান্ত ধারণার মাঝে থাকে যে, যা কিছু হয়ে যাক সে সেটিকে সামলে নিতে পারবে। এ ধরণের মনোভাব ব্যক্তিকে আসন্ন বিভিন্ন বিপদ সম্বন্ধে অন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যক্তি সচেতনতার অভাবে বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হয় এবং ভোগান্তিতে পড়ে।
তাছাড়া অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস ব্যক্তির মনে অহংকার সৃষ্টি করে। এই অহংকার বোধ ব্যক্তিকে অবস্থা পরিবর্তনে প্রচেষ্টা করা থেকে বিরত করে দেয়। আর প্রচেষ্টার অভাবই ব্যক্তির পতন নিশ্চিত করে।
তাই বলা যায়, যে কোন পরিস্থিতিতে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করা ভালো। তবে একই সাথে সম্ভাব্য বিপদ বা প্রতিকূল অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণাও রাখতে হবে এবং সেগুলো মোকাবেলায় যথাযথ পরিকল্পনাও করতে হবে।
সব সময় মনে রাখতে হবে যে, সামর্থ্য থাকলেও প্রচেষ্টার অভাবে যে কোন সহজ কাজও কঠিন হয়ে যায়। অতি মাত্রার আত্মবিশ্বাস একজন মানুষকে মানসিক ভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে তোলে। তাই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হয়ে বরং সচেতনতা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে নিজের সামর্থ্যকে প্রমাণ করতে পারলেই সফলতা আসবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা