অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এবং ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটির সূক্ষ্ম পার্থক্য

ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি

যখন আমিরা ছয় বছর বয়সে স্কুল যাওয়া শুরু করে, তার শিক্ষকেরা তার অভিভাবকদের জানায় যে, সে অন্যান্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের সাথে এই স্কুলে পড়তে পারবে না। তার শিক্ষার জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন।

শিক্ষকরা আরও জানায় যে, তার প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা একেবারেই আশানরূপ নয় এবং সে তার চার পাশে থাকা জিনিসপত্র গুলো নিয়ে পুনঃ পুনঃ একই কাজ করতে থাকে। এছাড়াও তার মধ্যে কিছু অসংহতিপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। যেমন- হাত ঝাঁপটান, বার বার নিজের ডেস্কে আঘাত করা ইত্যাদি লক্ষণীয়।

আমিরা তার সহপাঠীদের সাথে খেলতে পারে না এবং যখন তারা ওর সাথে কথা বলে তখন আই টু আই কনট্যাক্ট করতে পারে না। তার শিক্ষকদের আশঙ্কা ছিল যে, আমিরার ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটি রয়েছে।

এরপর আমিরার পিতামাতা তাকে মেডিক্যাল চেকআপের জন্য নিয়ে যায়। তারা এটা জানতে পারে যে, আমিরার শ্রবণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে। তারা এর সমাধানও করে। তারপর আশ্চর্যজনক ভাবে তার প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তার পুনঃ পুনঃ করা এবং অসংহতিপূর্ণ ব্যবহার গুলো বিদ্যমান থেকে যায়।

শেষ পর্যন্ত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তায় সেই সময় তাকে একজন উচ্চ কার্যকরীতা সম্পন্ন অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এর অর্থ হল আমরিার বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় কিছুটা বেশিই রয়েছে।

প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ অটিজমের ক্ষেত্রে প্রায় স্বাভাবিক বুদ্ধিমতা দেখা যায় এবং বাকীদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত অক্ষমতা থাকে। এএসডি এবং আইডি এর মধ্যে এই সুক্ষ্ম ব্যবধান টুকু থাকে।

অনেক ব্যক্তি, এমন কি চিকিৎসকেরাও এই দুটি বিষয় (এএসডি এবং আইডি) নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। কারণ অনেকভাবেই এই দুটি বিষয় একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে। বাস্তবিক অর্থে এএসডি এবং আইডি উভয়ই স্নায়ু বিকাশ জনিত ব্যাধি হলেও একদম একই রকম বিষয় নয়।

সংজ্ঞা অনুসারে, এএসডি হল পারস্পরিক সামাজিক যোগাযোগ জনিত বিকলতা এবং পুনঃ পুনঃ একই ধরণের ব্যবহার, আচার আচরণ এবং পছন্দসই কাজ করার প্রবণতা।

এএসডি এর লক্ষণসূচক বৈশিষ্ট্য সমূহঃ অবশ্যই একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ তিন ধরণের সামাজিক যোগাযোগ উপক্ষেত্র সমূহের এবং চার ধরণের সীমাবদ্ধ ও পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণের উপক্ষেত্র সমুহের যে কোন দুটি থাকতে হবে।

যেখানে আইডি হচ্ছে সাধারণ এবং দুর্বল বুদ্ধিমত্তা জনিত ঘাটতির উপস্থিতি যা শৈশব থেকেই শুরু হয় এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সাথে সাথেই চলতে থাকে।

আইডিলক্ষণসূচক বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে দুটি অবশ্যম্ভাবী বিষয় রয়েছে: স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ কম বুদ্ধিগত দক্ষতা।যেমনটা বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তা (আইকিউ) জনিত পরীক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন সংক্রান্ত বিকাশের বিকলতা দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।

এএসডি এর ক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বেশী সাফল্য রয়েছে। এর ক্লিনিক্যাল অনুপাত প্রায় ৪-৬: ১।

কাউকে আইডি আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে প্রথমত আমাদেরকে আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা করতে হবে। যদি আইকিউ ৭০ এর কম হয়, তাহলেই তার আইডি আছে বলা যেতে পারে। এই মৌলিক বিষয়টির উপর ভিত্তি করে দেখা গেছে যে, প্রায় ২.৩% মানুষের মধ্যে আইকিউ ৭০ এর নিচে রয়েছে।

সময়ের সাথে সাথে আইএসডি এর উপসর্গ গুলো পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু নিয়মতান্ত্রিক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে, প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ যাদের মধ্যে পূর্বে এএসডি সনাক্ত হয়েছিল, তাদেরকে পরবর্তীতে আর এএসডি এর আওতায় আনা যায়নি। অর্থাৎ অনেকের ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধী উপসর্গ গুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন অভিযোজন জনিত সক্ষমতার উন্নতি সাধিত হয়।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসাজেদা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘স্বজন’
Next articleমানসিক সমস্যা সৃষ্টিতে ওভারপ্রোটেকটিভ প্যারেন্টিং
ডা. ফাতেমা জোহরা জ্যোতি
সহকারী সার্জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কভিড ১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল। রেসিডেন্ট, ফেইজ বি, চাইল্ড এন্ড এডলুসেন্ট সাইকিয়াট্রি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here