সামাজিক দূরত্বে মানসিক বিড়ম্বনা এবং করণীয়

0
180
দূরত্ব না মানলে শুধু মাস্ক করোনা ঠেকাতে খুব বেশি কার্যকর নয়: গবেষণা
কোভিড-১৯ মহামারীর এই দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমরা সবাই বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা যেন এটা ভুলেই গেছি যে, সামাজিক দূরত্ব মানেই মানসিক দূরত্ব নয়।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকরী প্রতিষেধক সর্ব সাধারণের মাঝে বণ্টন করা সম্ভব হয়নি। এই সময়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে সারা বিশ্বেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের স্বাভাবিক জীবনের গতি প্রকৃতি। আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। আত্মীয় স্বজন বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছেনা। এটি যেমন আমাদের সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করছে আবার এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে আমাদের মনস্তত্ত্বের উপর। আমাদের মাঝে একাকীত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় আমরা নিজেদের অসহায় এবং সবার থেকে দূরে, বিচ্ছিন্ন ভাবছি। এটি আমাদের আচার আচরণ, আমাদের আবেগ অনুভূতি, চিন্তাভাবনা, সব কিছু প্রভাবিত করছে এবং নেতিবাচক দিকে ধাবিত করছে। কিন্তু আমরা এটা ভুলে গেছি যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করা নয়। তাই আমাদের কাজ, কর্ম এবং চিন্তা ভাবনা দ্বারা মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে হবে এবং মনস্তাত্বিক ভাবে সবার সাথে জুড়ে থাকতে হবে। আর এজন্য কিছু কিছু বিষয় আমাদের লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

১) আমাদের এই সীমাবদ্ধতা শারীরিক, মানসিক নয়ঃ
করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে আমাদেরকে বিশেষ করে ঘরে থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই দুঃসময়েও আমাদেরকে একে অপরের সাথে জুড়ে থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতা তো রয়েছে, কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা নয়। এই সময়ে আমাদেরকে আরও বেশী করে মানসিকভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সম্পর্ক গুলোও আরও মজবুত করতে হবে। ফোনে কথা বলা, ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অপরের সাথে দেখা করা, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে একে অপরের খোঁজ খবর নেওয়া- এগুলো আমরা করতেই পারি। এটি আমাদের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি ও বন্ধন আরও দৃঢ় করবে এবং আমাদের মনস্তাত্বিক সমস্যাগুলো ও কমাবে।

২) মহামারীতে সম্পর্কের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়াঃ
করোনাকালীন আইসোলেশন আমাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতার মাত্রা স্বাভাবিক সময়ের থেকে প্রায় আরও তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সম্পর্ক গুলোকেও আমাদের এই পরিবর্তিত মানসিক অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করতে হবে। আমাদেরকে একে অপরের উদ্বিগ্নতা, একাকীত্ব, মানসিক চাপ এগুলোকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের সম্পর্ক গুলোকে ভেঙ্গে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে হবে। একে অপরের মানসিক অবস্থাকে বুঝতে হবে এবং একে অপরের মানসিক শক্তির আধার হয়ে উঠতে হবে।

৩) একা থাকাকে একাকীত্ব ভেবে ভুল করা যাবেনাঃ
একা থাকা সম্পূর্ণ রূপে একটি শারীরিক বিষয়, কিন্তু একাকীত্ব মানসিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক দূরত্ব আমাদের একাকী করে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এটি আমাদের মানসিক অবস্থার উপর কোন চাপ প্রয়োগের নাম নয়। তাই এই শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে মানসিক অবস্থার নাম প্রদান করে ভুল করা যাবেনা। এতে আমাদের মধ্যে ভয়, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা অযথা বেড়ে যাবে। সামাজিক দূরত্ব আমাদের মনের ভালবাসাকে কখনোই কমানোর সক্ষমতা রাখেনা এটিকে সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে।

৪) সময়ের সাথে পরিবর্তনঃ
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে করোনার ফলে সৃষ্টি হওয়া এই সামাজিক দূরত্বের বেড়া জাল আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত করেছে। কিন্তু এটাও ঠিক এই পরিস্থিতির সাথে লড়াই করেই আমাদেরকে টিকে থাকতে হবে। ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। এই পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন পথ আমাদের সামনে নেই এটি আমাদের মন থেকে মেনে নিতে হবে। নিজেদের মানসিকভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করতে পারলে করোনায় সৃষ্ট মানসিক চাপ অনেকটাই প্রশমিত হবে। তাই পরিবর্তিত সময়ের সাথে নিজেদেরকেও পরিবর্তন করতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে।

শারীরিক দূরত্বকে মানসিক দূরত্ব ভেবে নিয়ে নিজেদেরকে গুঁটিয়ে নিলে চলবে না। মন ও ভাবনাকে আরও প্রসারিত করতে হবে যেন সেটি আমাদের শারীরিক দূরত্বের এই নেতিবাচক অবস্থাকেও অতিক্রম করতে পারে। এই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ আমাদের এই পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলার শক্তি ও সাহস যোগাবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-art-living-free/202010/the-problem-social-distancing

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleকোভিড ১৯ প্রেক্ষিতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অত্যন্ত জরুরি: রোকসানা আক্তার
Next articleএকাকীত্ব কাটাতে যা করতে পারেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here