সঠিক নিয়মে মাদকাসক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে

মানসিক রোগ ও মাদকাসক্তির চিকিৎসা এদেশে অপ্রতুল। দেশে ৭০ লক্ষেরও অধিক মানুষ মাদকাসক্ত। যার বৃহত্তর অংশই হলো তরুণ ও যুবক। অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মানসিক রোগ বিভাগ নেই। এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে যদি মানসিক রোগ বিভাগ চালু হয় তাহলে আরও অধিক সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা সেবার আওতায় আসবে। গতকাল ২১ জুন (বুধবার) মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তাগণ এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভাটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএপি’র সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মোহিত কামাল, বিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. ফারুক আলম, এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. গোলাম রব্বানী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডা. হেদায়েতুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর সভাপতি প্রফেসর ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং ডা. মেখলা সরকার। এতে মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকারক দিক এবং তার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদ বলেন, “তেজগাঁয়ে বর্তমান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিলো। যা ১৯৯০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র করা হয়। যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতছাড়া হয়ে যায়।”
প্রফেসর ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার বলেন, “মাদকাসক্তি সম্পূর্ণভাবে একটি মস্তিষ্কের রোগ যার কারণে একজন আসক্ত ব্যক্তি নানা ধরণের সমস্যার পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠে। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব।”
প্রফেসর ডা. ফারুক আলম বলেন, “মাদক সেবনের কারণে অধিকাংশ মানুষই মানসিক রোগে আক্রান্ত যা শুধু একজন আক্রান্ত ব্যক্তিকেই নয় বরং তার পরিবার ও সমাজকেও প্রভাবিত করছে। মাদকাসক্তি এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।” এছাড়াও তিনি সাইকিয়াট্রিক নার্সিং ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদকাসক্তদের চিকিৎসার আওতায় আনার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন এবং একই সাথে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটকে দুইশত শয্যা থেকে পাঁচশত শয্যায় উন্নতির ব্যাপারে মাননীয় মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রফেসর ডা. গোলাম রব্বানী বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে যে চিকিৎসা হচ্ছে তা কতটা নিয়মানুসারে হচ্ছে সেটি আমাদের জানতে হবে। যদি নিয়মানুসারে চিকিৎসা না হয় তাহলে সেটা হবে চিকিৎসার নামে একটি দূর্বৃত্তায়নের অপচেষ্টা। এ ধরণের দূর্বৃত্তায়ন আমাদের প্রতিরোধ করা উচিত। সঠিক নিয়মে মাদকাসক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।”
প্রফেসর ডা. হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, “সামগ্রিক আলোচনায় দেখা যাচ্ছে মাদকাসক্তি এবং তার চিকিৎসা একটি ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার আশু একটি সমাধান প্রয়োজন।”
প্রফেসর ডা. মোহিত কামাল সামগ্রিক আলোচনার সারমর্ম তুলে ধরে বলেন, “যেহেতু মাদকাসক্তির চিকিৎসা একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা তাই এটিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবী।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট সহ যতগুলো জাতীয় ইন্সটিটিউট রয়েছে তাদের সকলের দায়িত্ব হলো শুধু ইন্সটিটিউটে সীমাবদ্ধ না থেকে সারা দেশের হয়ে কাজ করা।” তিনি আরও বলেন, ‘মেন্টাল হেলথ এক্ট’ যেটি এখন সংসদে উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে সেটি কার্যকর হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজগুলো আরও সহজ হয়ে যাবে। তিনি আলোচ্য বিষয়গুলোকে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো রয়েছে তার অধিকাংশগুলোতেই মানসিক রোগ বিভাগের কোন শিক্ষক নেই। এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে যদি মানসিক রোগ বিভাগ খোল হয় তাহলে আরও অধিক সংখ্যক মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসা সেবার আওতায় আসবে।”
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানা হয়।
বিএপি’র দপ্তর সম্পাদক ডা. খালেকুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মূলত মাদকাসক্তির অপচিকিৎসার বিষয়টি সবার নজরে আসছে। আমরা চাই না মাদকাসক্তির চিকিৎসার নামে কোন অব্যবস্থাপনা চলুক।
উল্লেখ্য আগামী ২৬ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হবে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস।
প্রতিবেদক, মনেরখবর.কম


লক্ষ্য করুন- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য ডেপুটিদের প্রশিক্ষণ প্রদান
Next articleইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা জনিত রোগ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here