বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতার বিশ্ব। সবার মাঝে দিন দিন এই প্রতিযোগিতা,চাপ,ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে। আর এই প্রতিযোগিতাময় বিশ্বের সব থেকে বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিশুদের মনের উপর। তাদের আচার-ব্যবহারের উপর। একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে শিশুদের উপর বাড়তি চাপ ধিরে ধিরে তাদের মানসিক বিকারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যাকে আমরা সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখে খুব সহজেই অভিভাবকগণ বুঝতে পারবেন যে তাদের শিশুরা এই মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে কি না।
মানসিক উদ্বেগজনিত ব্যাধির কিছু সাধারণ লক্ষনঃ
- বিদ্যালয়ে বা কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ভীতি
- তার সম্পাদিত যে কোন কাজ অন্যরা কিভাবে দেখছে বা বিচার করছে এ সংক্রান্ত ভীতি
- তাদেরকে কোন প্রকার প্রদর্শনীর জন্য অনুরোধ করা হলে তাদের মাঝে অতিরিক্ত মানসিক উৎকণ্ঠা, বমি বমি ভাব, বা মাথা ব্যাথা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া
- বিদ্যালয়ে উপস্থিতি সংক্রান্ত সমস্যা ( বিশেষ করে অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা)
- বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, এবং প্রতিযোগিতা পরিহার প্রবণতা
মনোযোগ দিয়ে উপরে উল্লেখিত পয়েন্টগুলো দেখুন এবং যদি এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণ আপনার শিশুর মাঝেও দেখতে পান, তাহলে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করে দেখুনঃ
- বিদ্যালয়ে বা অন্য কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে এসব সমস্যাগুলো কি আপনার সন্তানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে?
- অনেক চেষ্টার পরেও কি আপনি আপনার সন্তানের মনের জোর বাড়িয়ে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন?
- ভয় এবং মানসিক উৎকণ্ঠা কি আপনার শিশুর সামাজিক ও মানসিক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে?
যদি আপনার সন্তানের মানসিক অবস্থার সাথে এসব বিষয় সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে আপনার সন্তানের মানসিক উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাদের উপর থেকে মানসিক চাপের এই বোঝা কমাতে এবং তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে নিচে বর্ণিত কিছু পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারেঃ
১) বাসা এবং বিদ্যালয়ে আপনার সন্তানের জন্য নিরাপদ এবং যত্নশীল পরিবেশ নিশ্চিত করুনঃ মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের শিকার শিশুদের ক্ষেত্রে নিজেকে নিরাপদ এবং সংকামুক্ত অনুভব করা খুবই কঠিন। আপনার সন্তানকে যে কোন নতুন বা অপরিচিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আগে সেই পরিবেশ সম্বন্ধে তাকে পর্যাপ্ত ধারণা প্রদান করুন। তাকে সেই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। তাকে যে কোন পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার শিক্ষা প্রদান করুন।
২) বিদ্যালয়ে শিক্ষণ কর্মীদের সাথে সম্মিলিতভাবে শিশুদের জন্য “নিরাপত্তা বলয়” তৈরি করাঃ শুধুমাত্র বাসার অভ্যন্তরেই নয় বরং বিদ্যালয়েও শিশুদের নিরাপত্তা বিধান করা সমান জরুরী। নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে শিশুরা নিজেদের সব রকম কলহ থেকে মুক্ত রাখতে পারবে এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ সম্বন্ধে সন্তুষ্ট হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
৩) শ্রেণীকক্ষের চাপ এবং ধকল থেকে মুক্ত থাকতে তাদের দিক নির্দেশনা প্রদানঃ আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং সব রকম চাপ থেকে নিজেকের দূরে রাখতে শিশুদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে হবে। এতে তাদের মাঝে আত্ম নিয়ন্ত্রণের অভ্যাসও গড়ে উঠবে। তারা মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হয়ে উঠবে।
৪) তাদেরকে উদ্বেগমুক্ত থাকার কৌশল শেখান এবং কখন সেগুলোকে কাজে লাগাতে হয় সে সম্পর্কে বোঝানঃ এটা বলা হয় যে, যথাযথ কৌশল অবলম্বন করে যে কোন মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এছাড়াও, যে কোন প্রতিকূল পরিবেশকে নিজের অনুকুলে ব্যবহারের কৌশল শেখাটাও বেশ জরুরী। উভয়ক্ষেত্রেই এসব কৌশল আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
৫) শিশুদের সব রকম ত্রুটিপূর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে দূরে রাখাঃ সব শিশুরাই গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে। অনেকসময় এসব গল্পের বিষয়বস্তু তাদের মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তাদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করে। এসব কারণে, খেয়াল রাখতে হবে যেন বড়দের কোন কাজকর্মের প্রভাবে শিশুদের মাঝে ত্রুটিপূর্ণ চিন্তাভাবনা বা মানসিকতা গড়ে না ওঠে। এক্ষেত্রে যে কোন গল্প শোনানের পূর্বে শিশুদের উপযোগী বিষয়বস্তু নির্বাচন করা খুব জরুরী।
শিশুদের শারীরিক পরিচর্যার সাথে সাথে তাদের মানসিক পরিচর্যা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জীবনযাত্রাকে কখনোই মানসিক চাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দেবেন না। একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার শিশুর যথাযথ মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা আপনার একান্ত দায়িত্ব। আপনার সাহায্য এবং নির্দেশনার সহায়তায় আপনার শিশু সব রকম মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে