করোনা মহামারীর অসুস্থ ও অস্বাভাবিক সময়ে আপনার পরিবারের শিশু কিশোরদের মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং এর বিকাশ ত্বরান্বিত করতে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখুন এবং মেনে চলুন।
এটি সর্বজন স্বীকৃত যে, যে বছরটা আমরা সদ্য পার করলাম সেটি আমাদের জীবনের অন্যতম কঠিন একটি বছর। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জীবনেই নেমে এসছে চরম বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘদিন ধরে আমরা কেউই বাসা থেকে স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারছিনা। শিশু কিশোরেরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন। বছরটা সবার জন্যই যেন অনেক দীর্ঘ এবং পীড়াদায়ক।
এছাড়াও, শুধু দুর্ভোগ নয়, করোনা মহামারী সৃষ্টি করেছে এক চরম আশঙ্কা যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে অনাগত নতুন বছর এবং আসন্ন দিনগুলিতেও আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারবো কিনা বা আদৌ পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো কিনা। এমন অবস্থায় শিশু কিশোরদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে অধিক মনোযোগ এবং সহানুভূতির প্রয়োজন রয়েছে। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে তারা যেন মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং তাদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য তাদের মানসিক বিকাশ যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, বাঁধাগ্রস্ত না হয় সেই প্রচেষ্টা করতে হবে। নিচে উল্লেখিত বিষয় গুলো খেয়াল রাখলে শিশু কিশোরদের জন্য বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থা কিছুটা সহজ করা সম্ভব হবে।
১) তাদের ভাবনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া
সব সময় মনে রাখবেন শিশু কিশোরদের মানসিক অবস্থা প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে অনেক বেশী সংবেদনশীল হয়। তাই এই অস্বাভাবিক সময়ে তাদের মনের অবস্থাও অন্য সময়ের থেকে অনেক বেশী বিচলিত এবং অস্থির হয়ে রয়েছে। এই সময়ে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল ব্যবহার করা সব থেকে বেশী প্রয়োজন। নিজের মনের ইচ্ছে তাদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে বরং তাদের মন কি চায় সেটিকে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিন। তারাও নিশ্চয়ই এই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার সর্বোচ্চ প্রয়াস করছে। অভিভাবকদের শুধু তাদের মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহাজ্য করতে হবে যেন তাদের এই প্রয়াস ব্যর্থ না হয়।
২) তাদের মন থেকে করোনা ভীতি দূর করে আশার সঞ্চার করা
করোনা আতঙ্ক আমাদের সবার জীবনকেই স্থবির করে তুলেছে। তবে শিশু কিশোরদের মাঝে যেন এই আতঙ্ক একটু বেশী মাত্রাতেই রয়েছে। তারা বুঝতে পারছেনা যে এই স্থবিরতা কাটিয়ে কিভাবে তারা আবার পূর্বের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে। লেখাপড়া, খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো থেকে শুরু করে সব রকম আনন্দদায়ক কাজ থেকেই তারা বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং কবে এসব কাজের সুযোগ আবার ফিরে আসবে সেটি একদমই অনিশ্চিত। অভিভাবকদের এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে কারণ শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশু কিশোরদের মন থেকে করোনা আতঙ্ক দূর করার প্রয়াস করতে হবে। তাদেরকে ঘরে থেকে কিভাবে আনন্দে রাখা যায় সেই প্রয়াস করতে হবে। তাদের মনোযোগ করোনা নামক সংকট থেকে সরিয়ে অন্যান্য যে সব কাজে তারা আনন্দ লাভ করে সেসব কাজের দিকে নিতে হবে।
৩) নিজের আচার ব্যবহার এবং চিন্তা ধারায় বদল আনুন
শিশুর মানসিক অবস্থার উপর আপনার আচার ব্যবহার এবং প্রতিক্রিয়া গভীর প্রভাব ফেলে। তাই এই সময়ে চেষ্টা করুন কোন রকম ভুল দৃষ্টান্ত স্থাপন না করার। কোভিড-১৯কে আপনি কিভাবে দেখছেন এবং এটি নিয়ে কেমন মানসিকতা লালন করছেন সেটি দেখেই তারা শিখবে। তাই নিজেকে আগে পরিবর্তন করুন যেন আপনার শিশুর উপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মানসিক শক্তি অটুট থাকলে সব রকম পরিস্থিকিতে সফলভাবে মোকাবেলা করা যায়। তাই শিশু কিশোরদের মনে সব সময় আশার বাণীকে জাগিয়ে রাখুন। তাদেরকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করুন। তাদের মাঝে আনন্দের সঞ্চার করতে চেষ্টা করুন। আজকের সন্তানেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শিশু কিশোরদের বর্তমান সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য মানসিকভাবে সুস্থ রাখুন, যথাযথভাবে প্রস্তুত করুন।
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে