লকডাউন অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা

লকডাউন অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা
লকডাউন অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা

করোনা ভাইরাস সঙ্কট এবং এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশে যে অবরূদ্ধময় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে তা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর বিরূপ প্রভাব পরছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবার্তা দিয়েছে।
WHO-র ইউরোপিয়ান শাখার সভাপতি হ্যান্স ক্লুজ গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বলেন, “আইসোলেশন, শারীরিক দূরত্ব, স্কুল ও কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি আমাদের জন্য এক বিরূপ পরিস্থিতি যা আমাদেরকে আক্রান্ত করছে, এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই সময় আমরা মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, ভয় এবং একাকিত্ব্বে ভুগছি”।
ক্লুজ বলেন, “সামনের কয়েক সপ্তাহ জনগনের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নজর দেয়া খুবই জরুরি”।
“এটা পূর্নবেগে দৌড়ানোর বিষয় নয়, এটা ম্যারাথন,”সে যোগ করেন এবং সকল দেশকে তার জনগনের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা সেবা প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
বিহ্যাভিউর‍্যাল সাইকোলোজিস্ট ভার্জিন ডি ভস-এর মতে, এই সঙ্কটের ফলে পরবর্তি কয়েক সপ্তাহে বিষণ্ণতার  অথবা কার্যক্রমে অংশগ্রহন না করার লক্ষন প্রকাশ পেতে পারে। সে বিশ্বাস করে, জনগনের সবচেয়ে বড় মানসিক সমস্যা হবে অপর্যাপ্ত টেস্ট এবং রোগ নির্নয়ের অভাব।
“অনেক মানুষ যাদের লক্ষন আছে, কিন্তু টেস্ট করা হবেনা, যেকারনে তারা জানতেও পারবেন না যে, তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা। এই অনিশ্চয়তা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্বক বিরূপ প্রভাব ফেলবে,”বলেন ভার্জিন ডি ভস।
এদিকে, দ্যি ইউরোপিয়ান ফেডারেশন অফ সাইকোলোজিস্ট এ্যাসোসিয়েশন বিশ্বাস করে, অনলাইন কনসাল্টেশন, বিশেষ করে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এবং থেরাপি একটি গ্রহনযোগ্য বিকল্প সেবা হতে পারে।
“COVID-19 এর জনস্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ হওয়া উচিৎ মানসিক স্বাস্থ্য”জোর দিয়ে বলেন WHO-এর মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আয়শা মালিক, যে বিশ্বাস করে, স্বাস্থ্যকর্মী এবং শিশুরা হচ্ছে এই এই সঙ্কটে মানসিকভাবে বেশি আক্রান্ত।
 চিকিৎসকরাও ঝুঁকিতে
চিকিৎসা পেশার দৈনন্দিন চাপের পাশাপাশি তারা এখন সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউরোপের ১০ জনের একজন  করোনা আক্রান্ত রোগী এই পেশার। গত বৃহস্পতিবার এক ডজন ইউরোপিয়ান সংস্থা চিকিৎসা পেশার লোকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষিত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশকে পরামর্শ ওচাপ দেন।
তারা আরো বলেন“মেডিকেল স্টাফদের কাজের মধ্যে বিরতি থাকতে হবে, শিফটের মধ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রাম থাকতে হবে, যাতে তারা এই সঙ্কটকালীন সময়ে দীর্গমেয়াদে সেবা দিতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে কাজ করলে মানসিক চাপ বহুগুন বেড়ে যায়, তাই যথাযথ সহায়ক সেবা তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে রাখতে সাহায্য করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে, যারা বেশি ঝুকিপূর্ন পজিশনে কাজ করবে তাদের শিফটিং রোটেট (বৃত্তাকারে পরিবর্তন) করতে হবে, বিভিন্ন কাজের দলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, মনোসামাজিক দলের উপস্থিত থাকতে হবে, এবং নিশ্চিত করতে হবে, যারা একেবারে সম্মুখে কাজ করবে তাদের যেনো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকে।
WHO-এর মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আয়শা মালিক বলেন, শিশুরা মারাত্বক ভয় পাচ্ছে, আতংকিত হচ্ছে, উদ্বিগ্ন হচ্ছে যা একইরকম আমরা বড়রা পাচ্ছি, যেমন- মৃত্যুর ভয়, প্রিয়জন হারানোর ভয়, চিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তার ভয়।
যাই হোক, ডি ভসের মতে, পিতামাতার মনোভাব এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ন। “ যদি পিতামাতা এই সময় অস্থিরতা এবং আতংকগ্রস্ততা প্রকাশ করেন, তাহলে তা শিশুদের আচরনের উপর প্রভাব পরবে। এবং এই আচরন এমন বিশেষ কিছু যা শিশুরা খুব সহজেই গ্রহন করে”।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে, যে তারা শিশুদের (যাদের বয়স ৪-১০ বছর) মানসিক সুস্থতার উপর জোর দিয়ে একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করছে, যা খুব শিগ্রই বের হবে।
এছাড়া মালিক বলেন, ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভ্রান্ত অপবাদ, খুবই গুরুত্বপূর্ন ইস্যু, কারন, এটা আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। কোন দেশ বা কোন জাতি আক্রান্ত হবে, আর কারা হবে না, তা নিয়ে অপপ্রচার না করাই ভালো। কারন সময়টা বিভেদের নয়, সময়টা পৃথিবীর সকল মানুষের এক হয়ে লড়ার।
করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, নেই কোন কার্যকরি চিকিৎসা। তাইতো, হ্যান্স ক্লুজ শেষ করেন এই বলে, “এই মুহুর্তে আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে। আর এই সময়টা আমরা শ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন, বিভিন্ন প্রকার রিলাক্সেশন থেরাপি নিয়ে মানসিক চাপ কমাতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, স্বাস্থ্যবিধিমেনেচলতেহবে এবং একইসাথে আমাদেরকে আশাবাদী হতে হবে”।

Previous articleঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন সেই সাথে মেডিটেশন করুন
Next articleকরোনা: শিশুকে মানসিকভাবে সবল রাখতে যা করবেন
সহকারি অধ্যাপক, মনোরোগ বিভাগ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here