বাইপোলার ডিসঅর্ডার-এর উপসর্গ

বাইপোলার ডিসঅর্ডার-এর উপসর্গ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা Bipolar Disorder বা Bipolar Mood Disorder  বা বিপ্রান্তীয় আবেগী রোগ এক ধরনের মানসিক রোগ যা সাধারণত পর্যায়ক্রমে দেখা দেয়। এটাকে বিপ্রান্তীয় আবেগী রোগ বলা হয়, কারণ এই রোগের রোগীরা একবার খুব বেশি সক্রিয় বা ম্যানিক (Manic) হয়ে যায় আবার পর্যায়ক্রমে চুপচাপ (Depressive) বা ডিপ্রেসিভ হয়ে যায়।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায় শতকরা এক ভাগ। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সমান ভাবেই দেখা দেয়। বেশিরভাগই জীবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে দেখা দেয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে একটু কম বয়সে আসার প্রবণতা বেশি দেখা যায় এবং বেশির ক্ষেত্রে পুরুষদের ম্যানিক পর্যায় দিয়ে দেখা দেয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক একটু বেশি বয়সে দেখা যায় এবং সাধারণত ডিপ্রেসিভ পর্ব দিয়ে দেখা যায়। তবে এর ব্যাতিক্রম যেকোনো ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এই রোগ পর্বে পর্বে দীর্ঘ দিন ধরে আসতে পারে বা দেখা দেয়

ম্যানিক (Manic) পর্বের উপসর্গ

ম্যানিক (Manic) পর্ব আসলে রোগীরা নিজেকে খুব বড় বা ক্ষমতাবান মনে করেন, নিজেকে খুব সুখি বা খুশি মনে করেন, নিজের অনেক স্পেশাল ক্ষমতা আছে বলে ভাবেন, ঘুমের প্রয়োজনিয়তা কম মনে করেন, কাজ কাম বেশি বেশি করেন, কথা বেশি বলেন, ধর্মীও কাজ বেশি করেন, মানুষকে সৎ উপদেশ দান করেন, খরচ বেশি করেন, বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা, কথা বার্তা বেড়ে যায়, অনেজ বড় বড় কাজ এক সাথে হাতে নেন কিন্তু একটাও শেষ করতে পারেন না, মতের বিরুদ্ধে কথা বল্লে রেগে জান, ভাংচুর করেন, খাওয়া দাওয়ার রুচি বেড়ে যায়। এর সাথে সাথে আরও অনেক উপসর্গ থাকতে পারে; যেমনঃ কানে কথা শুনতে পারেন যা অন্য কেও শুনেন না, মানুষকে সন্দেহ করতে পারেন, নিজে পীর বা ধর্মীয় গুরুজন হিসাবে দাবি করতে পারেন।

ডিপ্রেসিভ পর্বের উপসর্গ

ডিপ্রেসিভ পর্ব আসলে রোগীরা চুপচাপ হয়ে জান, মন ভালো লাগে না, কাজে কর্মে আনন্দ পান না, কাজ করতে ইচ্ছা করে না, ঘুমাতে চান কিন্তু ঠিক মত ঘুম হয় না, নিজেকে মূল্যহীন মনে হয়, মরে যেতে ইচ্ছা করে, অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, মানুষের সাথে মিশতে ভালো লাগে না, নিজের কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়, মুখের রুচি চলে যায়, ঠিক মত মনোযোগ দিতে পারেন না ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়া আরও কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে; যেমনঃ কানে খুব আজে বাজে কথা শোনা যা কিনা অন্যরা শুনেন না, মানুষের প্রতি ভ্রান্ত বিশ্বাস, নিজের প্রতি ভ্রান্ত বিশ্বাস এগুলো দেখা যেতে পারে।

monon-600

রোগের কারণ

এই রোগের কারণ একদম ঠিক করে বলা কঠিন। বংশগতি, পরিবেশের প্রভাব, ব্যক্তির নিজস্বতা, ব্যক্তি জীবনের চাপ, জীবনের পর্যায় সব মিলে এই রোগ দেখা দেয় বলে গবেষণায় দেখা যায়। আমাদের মস্তিষ্কে খুব সূক্ষ্ম কিছু রাসায়নিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হয়ে এই রোগ দেখা যায়। উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যায় ডোপামিন ও সেরোটোনিন এর কথা।

রোগের চিকিৎসা

আশার কথা হল উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর তত্ত্বাবধায়ন প্রয়োজন। পরিবার ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমন্নয় সহ চিকিৎসা নিলে এই রোগের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

প্রতিকার

যেহেতু এই রোগের আরোগ্য না হয়ে বার বার পর্বে পর্বে আসে, সুতরাং প্রতিকারের জন্য পরিবার ও কাছের মানুষদের খুব সতর্ক নজর রাখতে হবে যে, রোগী মেডিসিন খাচ্ছেন কিনা, নিয়মিত ফলোআপে আসতেছেন কিনা, ঘুমের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, মেজাজ বা মনের কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, ম্যানিক থেকে ডিপ্রেসিভ বা ডিপ্রেসিভ থেকে ম্যানিক হয়ে যাচ্ছেন কিনা ইত্যাদি বিষয়ে।

চিকিৎসা এবং প্রতিকার কেন দরকার 

চিকিৎসা এবং প্রতিকার রোগীর ও রোগীর পরিবারের জীবন মান কম ব্যাহত করে। রোগীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি কমানোর জন্য এবং আত্মহত্যার প্রতিরোধ সহ রোগী ও রোগীর পরিবারের সার্বিক সমন্বয় ঠিক রাখার জন্য  চিকিৎসা এবং প্রতিকার জরুরি।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

No posts to display

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here