প্যারেনটিং স্ট্যাইল এবং শিশুর বিকাশে তার প্রভাব

পিতা মাতা কিভাবে শিশুদের সামাজিক ও বুদ্ধিগত বিকাশে প্রভাব ফেলেন তা নিয়ে বিকাশ মনোবিজ্ঞানীরা প্রায় একশ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। শিশুর বিকাশে পিতা মাতার এই প্রভাব বোঝার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্যারেনটিং স্ট্যাইল কে বোঝা।
প্যারেনটিং স্ট্যাইল কিঃ এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যার অর্ন্তভুক্ত হল বিভিন্ন নির্দিষ্ট আচরণ, যেগুলো বিকাশ প্রক্রিয়ায় একক বা যৌথভাবে ক্রিয়া করে।
প্যারেনটিং স্ট্যাইল নিয়ে গবেষণার কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম যার কথা আসে তার নাম হল Diana Baumrind। তিনি প্যারেনটিং স্ট্যাইলকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যখাঃ
Authoritarian Parents: এসব পিতামাতারা উচ্চচাহিদা সম্পন্ন এবং উচ্চ নিদেশর্নাপূর্ণ কিন্তু তারা সন্তানদের প্রতি কম সহানুভূতি সম্পন্ন। তারা সন্তানদের কাছ থেকে বিনাশর্তে আনুগত্য পেতে পছন্দ করে। তারা আশা করেন তাদের সন্তানেরা কোন ব্যাখ্যা চাওয়া ছাড়াই তাদের আদেশ মেনে চলবে। এসব পিতা মাতারা একগুয়ে ধরনের হন এবং তাদের ছেলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান করেন। তাদের কিছু শক্ত নিয়ম কানুন থাকে এবং তাদের মতের সাথে দ্বিমত হওয়া তারা মোটেও পছন্দ করেন না।
Authoritative Parents: এধরনের পিতামাতাদের সন্তানের বিভিন্ন বিষয়ে প্রত্যাশাও থাকে আবার তারা সন্তানদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের সন্তানদের দায়িত্ব কর্তব্য কি হবে, কিভাবে সমাজে চলাফেরা করবে তা পরিষ্কারভাবে তাদেরকে জানিয়ে দেন। তারা সন্তানের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা পছন্দ করেন না। তারা তাদের সন্তানের প্রতি অ্যাসারটিভ হন এবং আশা করেন তাদের সন্তানেরাও অ্যাসারটিভ হোক এবং সামাজিক দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হোক। তারা চান তাদের সন্তানেরা আত্ননিয়ন্ত্রিত হোক এবং অন্যের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করুক। সন্তানেরা যত বড় হতে থাকে তত এসব পিতামাতা তাদের সন্তানদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
Permissive Parents: এসব পিতামাতাকে প্রশ্রয়দানকারী পিতামাতা বলা হয়। তারা তাদের সন্তানের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল এবং সন্তানের কাছে তাদের চাওয়া পাওয়া কম থাকে। তারা নরম প্রকৃতির এবং প্রথাগত বা গতানুগতিক পিতামাতা থেকে আলাদা। এরকম পিতামাতারা তাদের সন্তানদের উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেন না। তারা সন্তানদের যে নির্দেশনা দেন সেগুলো প্রায় অসামজ্ঞস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
Uninvolved Parents: এধরনের পিতামাতা সন্তানের প্রতি কম সহানুভূতিশীল এবং তাদের প্রতি প্রত্যাশাও কম। তাদের সন্তানের প্রতি কোন আবেগীয় বন্ধন থাকে না। সন্তানেরা অবজ্ঞা, অবহেলা পেয়ে মানুষ হতে থাকে। সন্তানকে শুধু খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় দেওয়াই তাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন। সন্তানের প্রতি তাদের আগ্রহ কম থাকে। তাদের সন্তানেরা প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক অ্যাবিউজের শিকার হয়ে থাকে।
monon-600
প্যারেনটিং এর ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ন আর তা হলো Psychological Control. সাইকোলজিক্যাল কন্ট্রোল বলতে এমন কিছু নিয়ন্ত্রনকে বোঝায় যা সন্তানের শারীরিক ও আবেগীয় বিকাশে বাঁধা দেয় (Berber, 1996)। এই নিয়ন্ত্রন করা হয় মূলত সন্তানদের কাছ থেকে ভালোবাসা তুলে নিয়ে, মান অপমান করে, নানা ভাবে লজ্জা দিয়ে ইত্যাদি।
Authoritarian and Authoritative Parenting এর মধ্যে Psychological Control এই বিষয়টি তে পার্থক্য দেখা যায়। এই দুই ধরনের পিতামাতারাদেরই তাদের সন্তানের প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা থাকে এবং আশা করেন যে তাদের সন্তানেরা সঠিকভাবে আচরণ করবে এবং পিতা মাতা কর্তৃক আরোপিত নিয়ম কানুন মেনে চলবে। Authoritarian parents- রা আরও আশা করেন যে তাদের ছেলেমেয়ে তাদের বিচার, মুল্যবোধ ইত্যাদি বিনা প্রশ্নে মেনে নিবে। অন্যদিকে, Authoritative Parents রা কোন বিষয়ে আলোচনার বিষয়ে বেশ উদার মনের হন। কোনবিষয়ে সন্তানের মতামত সঠিক হলে সেটা মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করেন না।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleশিশু যৌন নির্যাতনঃ প্রয়োজন অভিবাবকদের সচেতনতা
Next articleহস্ত মৈথুন ক্ষতিকর নয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here