বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে কেন কোন সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা দুজন মানুষ একে অপরের সাথে প্রতারণা করে; এই মানসিকতা কেন একজন মানুষের মাঝে গড়ে ওঠে।
পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস একটি সুন্দর সম্পর্কের ভিত্তি এবং একজন সঙ্গী মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক উভয় ভাবে তার সঙ্গীর সাথে এই সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। প্রতারণা নিঃসন্দেহে এরকম সুন্দর একটি সম্পর্ককে ভেঙ্গে দেওয়ার শক্তি রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রতারণার মানসিকতা বৈবাহিক এবং বিবাহ পূর্ব সম্পর্কে ভাঙ্গনের একটি বড় কারণ। প্রতারণা গার্হস্থ সহিংসতাকে উসকে দেয় এবং এটি নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্য, বিষণ্ণতা এবং উদ্বিগ্নতার একটি প্রধান কারণ। প্রায় ২৫-৩০% বৈবাহিক সম্পর্কেই নারী বা পুরুষ একে অপরকে প্রতারণা করে এবং ফলশ্রুতিতে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। তাই প্রতারণার এই চূড়ান্ত মানসিক অবক্ষয় থেকে বিরত থাকতে সবারই প্রতারণা থেকে বিরত থাকার প্রচেষ্টা করা উচিৎ।
এতসব প্রকট মানসিক সমস্যা উপেক্ষা করেও কেন কেউ প্রতারণা করে? আসুন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১) সম্পর্কে সৌহার্দ এবং ভালবাসার অভাবঃ সব ক্ষেত্রে না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘ মেয়াদী ভালবাসার সম্পর্কেও হঠাত একজন সঙ্গী পারস্পরিক সৌহার্দ এবং ভালবাসার অভাব অনুভব করতে পারেন। এসব কারণ তাকে একটি অবৈধ সম্পর্কের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ভালবাসার সম্পর্কে ভালবাসার এই অভাব তাদেরকে প্রতারণার জন্য মানসিক জোর প্রদান করে এবং তারা নির্দ্বিধায় প্রতারণার পথে অগ্রসর হয়।
২) বৈচিত্রের অভাবঃ অনেক সময় এমন হয় যে প্রতারণা কোন সমস্যার ফলাফল রূপে না সংগঠিত হয়ে বরং দাম্পত্য জীবনে বৈচিত্রের অভাব থেকে সংগঠিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতারণার মানসিকতা সম্পন্ন দম্পতীদের প্রায় ৭৪ শতাংশই তাদের দাম্পত্য জীবনে বৈচিত্রের অভাব থেকে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আর নারীদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশী দেখতে পাওয়া যায়।
৩) অবহেলা অনুভব করাঃ সম্পর্কের মাঝে দুজনের কেউ যদি মনে করে যে অপর জন তাকে অবহেলা করছে বা তার মাঝে ভালবাসার অভাব অনুভব করে তাহলে মনের মধ্যে এক চাপা অভিমান সৃষ্টি হয়। এবং এক সময় এই অভিমানই তাদেরকে অবৈধ সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যায় পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই কারণে প্রতারণার পথে অগ্রসর হওয়ার মাত্রা বেশী।
৪) সময়ের প্রয়োজনঃ সব সময় এমন হয়না যে মনের মাঝে থাকা কোন অসন্তোষ থেকে দাম্পত্য জীবনে কেউ প্রতারণা করে। এমন অনেকে আছে যারা পরিস্থিতির শিকার হয়েই একরকম প্রতারণার পথে অগ্রসর হয়। নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশী মাত্রায় এই কারণে প্রতারণা করে।
৫) আত্মসম্মান বজায় রাখাঃ অনেক ব্যক্তিগত কারণের মধ্যে একটি হল আত্ম সম্মান বা ব্যক্তিত্ব। অনেকেই নিজের আত্ম সম্মান বজায় রাখতে প্রতারণার পথ বেছে নেয়।
৬) ক্রোধের বশবর্তী হয়েঃ এটা প্রতারণার সাধারণ কারণগুলোর একটি না হলেও অনেক দম্পতীদের মধ্যেই ক্রোধের মানসিকতা থেকেই প্রতারণায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এই কারণ গুলোর ক্ষেত্রে, সঙ্গীকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার মানসিকতা থেকে বা প্রতিশোধের মানসিকতা থেকে একজন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
৭) দায়বদ্ধ মনোভাবের অভাবঃ ভালবাসা, যত্ন এবং সম্পর্কে দায়বদ্ধতার অভাব দেখা দিলে একজন সঙ্গী তার অসন্তোষ থেকে অন্য কারও সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নারীদের মাঝে এই প্রবণতা বেশী মাত্রায় দেখা যায়।
৮) যৌন চাহিদাঃ প্রায় এক চতুর্থাংশ দম্পতীদের মাঝে দেখা গেছে যে তারা তাদের সঙ্গীর সাথে দাম্পত্য ও যৌন জীবনে সুখী নয়। এই মানসিক প্রশান্তির অভাবই তাদেরকে প্রতারণার পথে নিয়ে যায়। নারীদের তুলনায় পুরুষের মাঝে এই প্রবণতা বেশী দেখা যায়।
এছাড়াও আরও অনেক শারীরিক ও মানসিক ছোট বড় কারণ আছে যা দম্পতীদের প্রতারণায় প্ররোচিত করে। তবে এই মানসিকতা থেকে কখনোই ভাল ফল আসেনা। সম্পর্কে উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে