দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অবশেষে পাচ্ছে নবজাগরণের স্পর্শ। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয় মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায়। সেই সভার মাধ্যমে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভা-পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১,৩৬৫ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পে রূপ নিচ্ছে দেশের প্রাচীনতম মানসিক হাসপাতাল । প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা অসুস্থ থাকায় ঐদিন নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তীতে তাঁর দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাবনা মানসিক হাসপাতাল দেশের প্রাচীনতম মনোরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র। বর্তমানে ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে ১৮টি ওয়ার্ডে সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৫০টি পেয়িং ও ৩৫০টি নন-পেয়িং শয্যা রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হাসপাতালটির ১১১ একরের মধ্যে প্রায় ৩০ একর ভূমি বর্তমানে পাবনা মেডিকেল কলেজের আওতায়। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে সেবা কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমানে এক্স-রে, প্যাথলজি, ইসিজি ও ইইজি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও আন্তর্জাতিক মানের পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনস্টিক, পুনর্বাসন ও আবাসন সুবিধা অনুপস্থিত।
নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও মানসম্মত আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
মানসিক রোগ চিকিৎসার অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস – এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, এতদিনে কহিলো অরিন্দম।মন ও শরীর নিয়েই আমাদের অস্তিত্ব। সুষ্ঠু মানসিক স্বাস্থ্য যে কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আশা এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মানসিক রোগ চিকিৎসার অগ্রগতির পাশাপাশি মানসিক রোগ প্রতিরোধ ও সুষ্ঠু মানসিক স্বাস্থ্য সম্পন্ন বিবেকবান জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি।আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (BACAMH) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে আরো ভালোভাবে সবার কাছে পৌছে দেয়া যাবে বলে মনে করি। গবেষণা, শিক্ষা সহ মানসিক স্বাস্থ্যের সবকিছুতেই উন্নতি হবে। পৃথিবীর বড় বড় মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সাথে তথ্য আদান প্রদান করে আধুনিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গঠনে ভূমিকা রাখবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল শুধু দেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পরিণত হবে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ইতিহাস দীর্ঘ হলেও এর প্রতি সরকারি ও সামাজিক গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল। অবকাঠামোগত ঘাটতি ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবের কারণে মানসিক রোগীদের সেবা দীর্ঘদিন অবহেলিত থেকেছে। তাই পাবনা মানসিক হাসপাতালের উন্নয়ন প্রকল্পকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু হাসপাতালের সেবা নয়, দেশের সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার মানও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-