পরামর্শদান ক্ষমতার বোধ সৃষ্টি করে

এমন অনেক উপায় আছে পৃথিবীতে, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজেকে ক্ষমতাশালী মনে করে। সামাজিক অবস্থান এরকম একটা বিষয়। উদাহরণস্বরূপ: একজন কলেজ শিক্ষক অবশ্যই তার শ্রেণীকক্ষের ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ক্ষমতাবান, কিন্তু কলেজের ডীন বা কর্তৃপক্ষের চেয়ে নন। এখানে ব্যক্তিত্বের উপাদানগুলোও কিছুটা প্রভাব রাখে। যাদের নিজ কর্মদক্ষতার ও কতৃর্ত্ববোধ আছে তারাই অনুভব করতে পারে যে তাদের ক্ষমতা আছে।
Michael Schaerer, Leigh Tost, Li Huang, Francesca Gino, and Rick Larrick এর Personality and Social Psychology Bulletin এ প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে, অন্যদেরকে উপদেশ দেয়া নিজের মধ্যে ক্ষমতাবোধ জাগায়। যখন আপনি কাউকে উপদেশ বা পরামর্শ দেন, তখন আপনার মধ্যে এমন অনুভূতি কাজ করে যে, অন্যরা আপনার পরামর্শ অনুসরণ করবে। অন্যের আচরণের মধ্যে প্রভাব রাখতে পারাটাই আপনাকে ক্ষমতাবান হওয়ার অনুভূতি দিবে।
একটি গবেষণা এমন ছিল যে, অংশগ্রহণকারীদের একটা দলকে বলা হয় তাদের এমন একটি কথোপকথনের বিষয় স্মরণ করে লিখতে, যখন তারা কাউকে পরামর্শ দিচ্ছিল। আরেকটি দলকে বলা হয় সাধারণ একটি কথোপকথন স্মরণ করতে। এরপর তারা একটি স্কেল ভরাট করেছে যেটা ছিল ওই কথোপকথনের সময়ে তারা নিজেদের কতটা ক্ষমতাবান মনে করেছিল তার ওপর। ফলাফলে দেখা গেছে, যারা পরামর্শদানের সময়টা লিখেছে তারা অপর দলের তুলনায় নিজেদের বেশি ক্ষমতাবান মনে করেছে পূর্বের কথোপকথনের সময়। পরিসংখ্যান বলে, অপরের উপর প্রভাব খাটানোর বিষয়টাই এই পার্থক্যের কারণ।
অন্য দুটি গবেষণায় দেখা হয়েছে যে, কেউ ক্ষমতাবান হওয়ার উদ্দেশ্যেই পরামর্শ দেয় কি-না।
যেমন: একটি দলের অংশগ্রহণকারীরা ছিল এমবিএ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী, যারা কিছুদিন পরেই কোর্সের অংশ হিসেবে একটি আপসসূচক আলোচনায় বসবে। তাদেরকে একটি স্কেল পূরণ করতে দেয়া হয়, যা তাদের ক্ষমতাবান হওয়ার প্রবনতাকে পরিমাপ করে। আলোচনার পর অপর দলকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে কতটা পরামর্শমূলক কথা শুনেছে। দেখা যায়, ওই স্কেলে যাদের ক্ষমতাবান হওয়ার আগ্রহ ছিল তারাই বেশি পরামর্শমূলক কথা বলেছে।
আরেকটি গবেষণায় কিছু মানুষকে পরামর্শদানের পূর্বে ও পরে পরিমাপক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে একটি দলকে কোনোভাবে জানানো হয় যে, তাদের পরামর্শ কাজে দিবে। অপর দলকে জানানো হয় তাদের পরামর্শ কাজে দিবে না। মতামত দেয়ার পরও তাদের আবার ক্ষমতাপরায়ণতা পরিমাপক ব্যবহার করা হয়।
সর্বোপরি, পরামর্শদান করায় ক্ষমতার অনুভূতি জাগায়। যারা ক্ষমতায় আগ্রহী তাদের ক্ষেত্রে এটা সত্যি। তবে যখন অন্যদের উপর প্রভাব আর কাজ না করে, তখন পরামর্শদানের প্রবণতাও কমে আসে। এই গবেষণাগুলো বলে যে, যখন কারো ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ থাকে তখনই অনেকের মধ্যে পরামর্শদানের প্রবণতা কাজ করে। এমনকি যারা এরকম ব্যক্তিত্বের অধিকারী না, তারাও এটা স্বীকার করে। তবে যারা আসলে ক্ষমতাবান হতে আগ্রহী তারাই এধরণের সুযোগ গ্রহণ করে।
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে ডটকমে প্রকাশিত Art Markman এর রচনা অবলম্বনে লিখেছেন সাদিয়া আফরোজ শামস।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/ulterior-motives/201805/giving-advice-creates-sense-power

Previous articleসিজোফ্রেনিয়া কি ভালো হয়?
Next articleআবেগ উপলব্ধি করতে শিখুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here