বাংলাদেশে ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শতাধিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে৷ চমকে উঠার মতো খবর৷ কেন এত প্রাণের অপচয়? কী এর কারণ? সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক চাপ, একাকিত্ব, বিষাদ, হতাশা, প্রেম, প্রতারণা নাকি অন্যকিছু,কোন না পাওয়া থেকে তাদের মনে এত অভিমান জমা হয়েছিল৷ কেন পৃথিবীতে বেঁচে থাকা এতটাই অর্থহীন মনে হয় যে মানুষ নিজের হাতে নিজের জীবন নিয়ে নেয়৷
পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ কয়েকদিন আগে আবু মহসিন খান নামে একজন ব্যবসায়ী ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই ভিডিও।
ভিডিও দেখে যা বুঝা গেছে, এক সময়ের সফল ব্যবসায়ী আবু মহসিন এখন আর্থিকভাবে প্রতারিত একজন মানুষ, ব্যবসাও হারিয়েছেন৷ কাছের মানুষরাই তারা টাকাপয়সা মেরে দিয়ে তাকে নিঃস্ব করেছে৷ স্ত্রী আগেই মারা গেছেন৷ ছেলে বিদেশে, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে৷ ছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত৷ দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো মানুষটি কোভিড মহামারির কারণে সেটাও করতে পারছিলেন না বলে জানিয়েছেন তার ভাই৷ গত দুই বছর ধরে বাসায় একাই থাকতেন আবু মহসিন৷
তবে কী অসুস্থ শরীরে একাকিত্বের চাপ আর নিতে পারছিলেন না তিনি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী সেটাই মনে করেন৷ একটি দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক কামাল বলেছেন, কথা বলার এবং তার কথা শোনার লোক পেলে আবু মহসিন হয়তো আত্মহত্যা করতেন না৷
প্রযুক্তির উন্নয়নে পৃথিবী যেমন ছোট হয়ে যাচ্ছে, তেমনি আমরা এখন একক পরিবার গড়ে তুলছি৷ বাবা-মা আর সন্তান, এই নিয়েই পরিবার৷ সেই সন্তান যখন উন্নত জীবনের আশায় বা বিয়ে করে দূরে চলে যায় তখন বাবা-মা একা হয়ে পড়েন৷ সঙ্গীহীন হয়ে পড়লে তো কথাই নেই৷ তখন তারা চরম একাকিত্বে ভোগেন৷
আবু মহসিনের আত্মহত্যা শহুরে মানুষদের অন্তরআত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ কেউ কেউ বাবাকে সময় না দেওয়ার জন্য তার ছেলে-মেয়ের বিচার করতে বসে গেছেন৷ ভুল আসলে কার কিংবা আদপে কারো ভুলে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা সে বিতর্কে আর না যাই৷
কারণ, আমরা চাই আমার সন্তানরা উন্নত জীবন পাক৷ জানি তার বিনিময়ে আমাদের জন্য অপেক্ষায় আছে একাকিত্ব৷ সেই একাকিত্ব আমরা সামাল দিতে পাবো কিনা, সময় তার উত্তর দেবে৷
এই বিষন্নতা, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকা; আত্মহত্যার পেছনের বড় কারণগুলো অন্যতম৷
তাই আসুন স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধু বা প্রতিবেশী কারো মধ্যে এই লক্ষণ দেখতে পেলে এগিয়ে যাই৷ তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনি৷ শত ব্যস্ততার মাঝেও নিয়মিত তার খোঁজ রাখি৷ তাকে বোঝাই, সব পরিস্থিতিতে তার পাশে আছি৷ শক্ত করে তার হাতটা ধরি৷
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে