অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে এখন চাইলেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে কোনো বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পারেন। আর সবকিছুর মতো ঘুমের বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। ঘুম কি, ঘুমের উপকারিতা কি, ঘুম কেন প্রয়োজন, অনিদ্রার সমস্যা কি, ঘুমের ধরন কেমন হতে পারে, এমনকি ঘুম ঠিক রাখার উপায় এর সবকিছুই একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পেতে পারেন খুব সহজে।
ঘুম
ঘুম হলো ক্লান্তি অবসন্নতা ঝেড়ে ফেলে নতুন জীবন শুরুর এক ধাপ, ঘুম মানে পরিপূর্ণতা। সুস্থ এবং অসুস্থ সব মানুষের জন্যই ঘুম অতি প্রয়োজনীয়। অসুস্থতার জন্য রোগের চিকিৎসার যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্রয়োজন সুস্থ স্বাভাবিক ঘুমের মাত্রা, পরিমাণ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা।
ঘুম মানেই প্রশান্তি ও আরামের অনুভূতি। দিনের সকল ক্লান্তি মুছে নতুন জীবনের শক্তি ও প্রেরণা হলো ঘুম। বিজ্ঞান মতে, শরীরকে নতুন করে প্রস্তুত করাই হলো ঘুমের লক্ষ্য।
ঘুম কি?
ঘুম একটি মনোযৌবিক চাহিদা, যে চাহিদাটি মূলত শরীরের ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। শারীরিক, মানসিক অথবা শরীরের সাধারণ প্রক্রিয়ায় ঘুমকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে বাস্তবতা হলো এই যে, ঘুমের মূল কারণ ও ঘুমের প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষকগণ এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেননি। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ঘুমের লক্ষণগুলোকে আমরা সনাক্ত করতে পারি। যেমন, শরীর শিথিল হয়ে আসা, চোখ বন্ধ হয়ে আসা, শ্বাস প্রশ্বাস দীর্ঘ হয়ে আসা, শরীরের তাপমাত্রা কমে আসা ইত্যাদি।
অপরিপূর্ণ ঘুমের ফলে কি হয়?
ঘুমে অপরিপূর্ণতা থাকলে পরের দিনটি যায় অলসতা ও অমনোযোগিতার মধ্য দিয়ে। কখনও নিজের নিয়ন্ত্রণ কমে মেজাজ হয়ে যেতে পারে খিটখিটে, যার ফলে হতে পারে আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে সম্পর্কের অবনতি। নিয়মিত অপরিপূর্ণ ঘুম আপনার শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, তাই আপনি হয়ে যেতে পারেন শারীরিক ভাবে অসুস্থ। অপরিপূর্ণ ঘুমের ক্লান্তি আপনাকে করে রাখে আচ্ছন্ন, তৈরি হয় চিন্তার বিক্ষিপ্ততা।
অপরিপূর্ণ ঘুমের কারণ কি?
মূলত মানসিক সমস্যার কারণেই অপরিপূর্ণ ঘুম হয়। দুশ্চিন্তা, প্রাত্যহিক কাজের চাপ, সামাজিক চাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন ডিপ্রেশন, এংজাইটি, ওসিডি, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, যৌন রোগ এমনকি সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগের কারণে অনিদ্রা হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নেশাদ্রব্য ঘুমকে কমিয়ে দিতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন দীর্ঘদিন ধরে কোনো শারীরিক রোগে আক্রান্ত থাকার কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
স্বাভাবিক ঘুম কতটুকু?
ঠিক যতটুকু ঘুম আপনার শরীর মনকে স্বাভাবিক ও ক্লান্তিহীন রাখে ঠিক ততটুকু ঘুমই আপনার জন্য স্বাভাবিক ঘুম। এই ঘুমের মাত্রা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণ ভাবে যার মাত্রা দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘন্টা। তবে সময়টা যে নির্দিষ্ট হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ নির্ঘুম ব্যক্তিও প্রয়োজনীয় মুহুর্তে কর্মক্ষম থাকতে সক্ষম। যেমন- কোনো নির্ঘুম ব্যক্তি যদি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় তবে সেখানে তার প্রয়োজনীয় এলার্টনেস কাজ করতে পারে। এবং সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
সমস্যা কোথায়?
ঘুম শরীরের একটা নির্দিষ্ট রিদম বা ছন্দ ফলো করে। সাধারণত সেই ছন্দের উপর ভর করেই ঘুম আসে ও যায়। অনিদ্রা বা অনিয়মিত ঘুমের ক্ষেত্রে শরীরের স্বাভাবিক সে ছন্দের পতন ঘটে। দেহ ঘড়ির এই ছন্দ পতন হলে ঘুমাতে দেরি হয় বা ঘুমাতে পারা যায় না। অথবা ঘুমালেও কিছুক্ষণ পরপর ঘুম ভেঙ্গে যায়। অনেকের বেলায় এই ঘুম একবার ভেঙ্গে গেলে ঘুম আর আসতে চায় না। মোটের উপর ঘুমের সময় এবং পরিপূর্ণতা উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়।
ঘুমের এমন সমস্যা যদি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ চলতে থাকে তাহলে সমস্যাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ‘ইনসোমনিয়া’। ইনসোমনিয়া বাদেও ঘুমের আরো নানাবিধ সমস্যা থাকলেও এই ইনসোমনিয়ার মাত্রায় তুলনামূলক অধিক দেখা যায়। ইনসোমনিয়া কখনও আসে বিভিন্ন মানসিক রোগের সহরোগ হিসেবে আবার কখনও আসে একা একা। এছাড়াও কিছু কিছু শারীরিক রোগের সহরোগ হিসেবেও ইনসোমনিয়া হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা যেকোনো ব্যক্তির যেকোনো বয়সে হতে পারে তবে বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। আগামী পর্বে ঘুমের সমস্যার ধরন ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।
Nc