মায়েদের মানসিক চাপ কমাতে কিছু পদক্ষেপ

0
139
গর্ভবতী নারীর দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনভাইরাস

কি চলতে থাকে একজন মায়ের মনে যখন তিনি গর্ভবতী থাকেন? অজানা ভয় এবং অনাগত আশঙ্কায় তার মন সারাক্ষণ বিচলিত হয়ে থাকে। এই মানসিক চাপ একজন গর্ভবতী নারী এবং তার সন্তান, উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। তাই এর নিরাময় অত্যন্ত প্রয়োজন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মা হতে চলেছেন এমন নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের মনে যেমন নিজের সুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে তেমনি অনাগত সন্তানের সুস্থতা নিয়েও দুশ্চিন্তা থাকে। সব সময়ই তাদের মাঝে এসব চিন্তা ভাবনা ঘোরাফেরা করে যা কোনভাবেই দূর হতে চায়না। এছাড়াও নানা ধরণের দুঃস্বপ্ন তাদের তাড়া করে বেড়ায়। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ৯০ শতাংশের বেশী গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় এমন মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী দুর্ভাবনার শিকার হন। এগুলো তাদের মানসিক চাপের কারণ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে বিষণ্ণতা, অনিদ্রা সহ নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করে যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিচর্যা এবং নিবারণের অভাবে এগুলো বেশ সাধারণভাবেই দৈনন্দিন জীবনের সাথে অন্যান্য গর্ভকালীন স্বাভাবিক ঘটনার মতোই মিলেমিশে যায়। অধিকাংশ মানুষই তাদের এই মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাকে স্বাভাবিকভাবে দেখেন এবং গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এমন করা একেবারেই উচিৎ নয়। অন্যান্য শারীরিক জটিলতার মত মানসিক চাপও একজন গর্ভবতী নারীর জন্য সমান ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এসব মানসিক চাপ যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে সে  স্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে অবশ্যই।

সহজ ভাবে বলতে গেলে একজন মা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে নিজেকে তার সন্তানের সমস্ত দায় দায়িত্বের অধিকারী বলে মনে করেন। একটি নতুন জীবন তার মাঝে বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত যেমন তিনি অনুভব করেন এবং উপভোগ করেন, তেমনি সেই জীবনের দায়িত্ব নিয়ে কিভাবে সব কিছু সামলে নেবেন সেই চিন্তা তার মাঝে দুশ্চিন্তার জন্ম দেয়। তিনি মনে করেন সন্তানের সুস্থতা যে কোন প্রকারেই তাকে রক্ষা করতে হবে। আর এই দায়িত্ববোধ থেকেই মূলত ভয়ের সৃষ্টি হয়। কোন ভাবেই যেন তার সন্তান অসুস্থ না হয় সেই ভাবনা সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে ফেরে। সকল যুক্তি তর্ক এবং পরিস্থিতির ঊর্ধে উঠে তার মনে এই দুশ্চিন্তা সব সময়ই কাজ করতে থাকে। তাছাড়া নিজের সুস্থতা নিয়েও তার মাঝে থাকা অনেক দ্বিধা। যেহেতু এ সময়ে সব ধরণের শারীরিক জটিলতা বেড়ে যায় তাই তাদের মনে সর্বদা এই ভয় কাজ করে যে কোন ভাবে তার প্রাণ সংশয় হবেনা তো! এসব দুশ্চিন্তা সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে বেড়ায়। এতে ধীরে ধীরে তার মাঝে মানসিক জটিলতা গুলো আরও বেড়ে যায়।

একজন গর্ভবতী মা যেমন শারীরিক ভাবে তার সন্তানের সাথে জুড়ে থাকেন তেমনি মানসিক ভাবেও জুড়ে থাকেন। মায়ের মানসিক অবস্থা শিশুর মনস্তত্ত্বের উপর সরাসরি প্রভাব রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় ইতিবাচক চিন্তা করা সন্তানের ইতিবাচক মানসিক পরিবর্তনে সহায়তা করে। আর নেতিবাচক মানসিকতা, দুশ্চিন্তা সন্তানের মানসিকতাও নেতিবাচক এবং অসুস্থ তৈরি করে। এটি তার আচার ব্যবহার এবং মানসিক বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এমনকি এই সময়ে মায়ের পছন্দ অপছন্দ, রাগ, দুঃখ সব কিছুতেই শিশু প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ কারণে মায়ের শারীরিক অবস্থার সাথে সাথে মানসিক অবস্থা যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে সেটির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুর স্বাভাবিক এবং সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মায়ের মানসিক সুস্থতা অবশ্যম্ভাবী।

একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে শুধু একজন মাকেই নয়, বরং পরিবারের সবাইকেই প্রচেষ্টা করতে হবে। তার সুস্থ থাকার জন্য  সুস্থ পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি তার মাঝে আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা তৈরি করতে হবে। এই লক্ষ্যে সর্ব প্রথম তাকে এই আশ্বাস দিতে হবে যে পরিবারের সবাই তার পাশে আছে। একজন গর্ভবতী নারীকেও পরিবারের এই প্রচেষ্টার সাথে সহযোগিতা করতে হবে। নিজের মাঝে যে দুশ্চিন্তা এবং আশঙ্কা গুলো রয়েছে বা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো নিজের কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করতে হবে। তাদের খুলে বলতে হবে সব কিছু। ভয়ের কারণগুলো যখন স্পষ্ট হবে তখন সেগুলো সমাধান করা সহজ হবে। আর তাছাড়া বাস্তব বর্জিত যে দুশ্চিন্তা গুলো মনে বাসা বেধেছে সেগুলোও নির্মূল হয়ে যাবে। তাছাড়া একজন  প্রতিষ্ঠিত বা অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও এক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে।

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ঠ একটি অনুভূতি এবং এই সময়টি তার জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ঠ সময়। তাই এই সময়টায় সবাইই একটু বেশী সতর্কতা অবলম্বন করতে চায়। কিন্তু এই অতিরিক্ত সতর্ক থাকার প্রচেষ্টাই অনেক সময় মায়ের জন্য মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সতর্ক থাকতে হবে কিন্তু সেটি যেন দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে পরিণত না হয় সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই নিজে সুস্থ থাকা যাবে এবং সন্তানকেও সুস্থ রাখা যাবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/motherhood-made-real/202011/inside-mothers-mind

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleঅটিজমে আক্রান্ত শিশুদের প্রতি মায়েদের সচেতনতা
Next articleমন খারাপ হলে কি করবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here