হালকা উল্টাপাল্টা কাজে বা কথায় প্রচণ্ড মানসিক চাপ বোধ করি

0
9

প্রতিদিনের চিঠি – আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে এই ইমেইলে monerkhaboronline@gmail.com। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজMk4c Ads

সমস্যা – আমার বয়স ২৫-৩৫-এর মধ্যে। আমি নাম বলতে ইচ্ছুক নই। বাবা মারা গেছেন ছোটবেলায়। দেখিনি কখনো। শুধু ছবি দেখেছি। মা আর তিন মামার সাথে বেড়ে ওঠা আমার। তারা স্বাধীনচেতা মানুষ। পরিবারে কিছু ঝগড়া হয়। তবে সিরিয়াস না। আমার ডায়াবেটিস আছে।

তবে ব্ল্যাড সুগার খালি পেটে ৬-এর বেশি ওঠে না। ব্ল্যাড প্রেসার নেই। মাসিকের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, তবে থাইরয়েডের কারণে না। বেশি মোটা হয়ে যাওয়ার কারণে। আমার শ্বাসকষ্ট আছে। তবে সিরিয়াস না। মাঝখানে ২০১০ সালে আমার বিয়ে হয়। তবে স্বাভাবিক ছিল না। মেনে নিতে না পারায় ৩ মাসের মাথায় আমি ডিভোর্স দেই।

তারপর থেকে প্রায় ১-২ বছর ভালোই ছিলাম। বর্তমানে চাকুরির খাতিরে মা আর মামাদের থেকে দূরে থাকি। রুমমেট আছে ২ জন। তারাও হেল্পফুল না। কথায় কথায় ঝগড়া। যে কারণে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলি। কিন্তু বেশি পারি না কারণ তারা আমার অফিসে সহকর্মী। যেসব হালকা উল্টাপাল্টা কাজে বা কথায় আমি আগে মাথা ঘামাতাম না সে কথাগুলোয় ইদানীং প্রচণ্ড মানসিক চাপ বোধ করি। কী করব বুঝতে সমস্যা হয়। কাকে বিশ্বাস করা উচিত আর কাকে না সেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

আমাকে কেউ ভালোবাসে না সেই দুঃখ তো আছেই। কথায় কথায় খুব কান্না পায়। কাঁদিও অনেক। তবে চুপি চুপি। লুকিয়ে। খুব অস্থির হয়ে পড়ি। অনেক ক্ষেত্রে রাগারাগিও করি বেশ কিছুটা। কে আপন আর কে পর তা না বুঝেই। অথচ আগে এমনকি ২০১২ বা ২০১৩ সালেও আমি এরকম ছিলাম না। আমি দৃঢ়চেতা ও শক্ত মনের মানুষ হতে চাই আবার। যা আমি আগে ছিলাম।

পরামর্শ – আপনার প্রশ্ন পড়ে মনে হচ্ছে আপনার জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মামাবাড়িতে মানুষ হয়েছেন। কিন্তু এই মামাদের আপনার বাবার জায়গায় বসাতে পেরেছেন কিনা বা মামাদের কাছ থেকে বাবার মতো আদর পেয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট বোঝা গেল না। আপনার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারেননি বলে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছেন এবং এখন চাকরির জন্য পরিবার থেকে আলাদা থাকছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে আপনার মধ্যে যথেষ্ট সাহস ও মনোবল ছিল।

কিন্তু যে- কোনো কারণেই হোক সেটা এখন কমে যাওয়াতে আপনার মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতাবোধ সৃষ্টি হয়েছে। আর এজন্যই আপনার মধ্যে মানসিক চাপবোধ, কথায় কথায় কান্না করা, অস্থিরতা-এই সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে। আপনার রুমমেটদের সাথেও আপনার সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। হয়তো আপনি শেয়ার করার মতো কাউকে পাচ্ছেন না বলেই আপনার মধ্যে এক ধরনের একাকিত্ব বোধের সৃষ্টি হয়েছে।

তাই এ মুহূর্তে আপনার জীবনে এমন একজনকে প্রয়োজন যার সাথে আপনি সব কথা শেয়ার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি মনের মতো মানুষ খুঁজে নিতে পারেন। আর যদি এ ধরনের কোনো সম্পর্কে জড়াতে না চান তবে অন্ততপক্ষে একজন বন্ধুকে কাছে রাখতে পারেন যার ওপর আপনি আস্থা রাখতে পারেন এবং যার সাথে আপনার মনের সব কষ্ট শেয়ার করতে পারেন। কারণ, জীবনে কখনো একা চলা যায় না। মানুষ যখন নিঃসঙ্গ থাকে তখন মনে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে চিন্তা আসতে পারে। আর আপনার মনের মধ্যে একটা কষ্ট আছে যে কেউ আপনাকে ভালোবাসে না।

এটা কি নিছকই আপনার মনের ভুল নাকি এর পেছনে কোনো কারণ আছে সেটা ভেবে দেখা দরকার। আপনি বিয়েটা মেনে নিতে পারেননি বলে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছেন কিন্তু ঠিক কী কারণে মেনে নিতে পারেননি সেটা কি আপনি সবাইকে বোঝাতে পেরেছেন? আসলে আমাদের সমাজে একটা মেয়ে ডিভোর্স দিলে সেটা কেউ ভালোভাবে নেয় না। হয়তো আপনার মুরুব্বিরাও এটা মেনে নিতে পারেননি বলে আপনার সাথে তাদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাই আপনার উচিত হবে আপনার ডিভোর্সের যথার্থ কারণগুলো সবাইকে বুঝিয়ে বলা।

সবাই আপনাকে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু সেটা হয়তো আপনি বুঝতে পারছেন না। আর তাছাড়া কে আপনাকে ভালোবাসলো সেটা না ভেবে আপনি কাকে কতটা ভালোবেসেছেন সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? আপনি যদি কাউকে ভালোবাসা দিতে পারেন তবে আপনিও কারো থেকে ভালোবাসা পেতে পারেন। তাই আপনি আগে ভেবে দেখেন আপনি জীবনে কাকে কী দিয়েছেন আর জীবনের কাছ থেকে আপনার কী চাওয়ার আছে। আশা করি, আপনার চাওয়া-পাওয়াগুলো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলেই আপনার জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন-

অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা বেগম
মানসিক বিভাগ
বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ।

  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে কখন বিশেষজ্ঞের মতামত প্রয়োজন হবে ? –

  • এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন-Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
  • চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
    মগবাজার রেইল গেইট।
    নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
    (ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
    চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০

আরও দেখুন-

Previous articleমনের খবর-এর ১০ বছর পূর্তি: এক দশকের যাত্রাপথ
Next articleঋতুস্রাব বন্ধ সমস্যা ও সমাধানের কথা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here