করোনা থেকে যারা সেরে উঠছেন তাদের অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে কিছু গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চীনের উহানে সাধারণ অবস্থায় যেখানে এক শতাংশ মানুষের মানসিক সমস্যা ছিল, কভিডের পর তা বেড়ে হয়েছে ৭ শতাংশ!
যাদের রোগ এখনও হয়নি, তারাও আবার রোগের আতঙ্কে প্রহর গুনছেন।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা বলছেন, সমস্যা বাড়ে তাদের, যারা ছোটবেলা থেকে কোনও দুর্ঘটনার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার যারা সমস্যা সমাধান করার চেয়ে এড়িয়ে যাওয়া বেশি পছন্দ করেন বা কারও সাহায্য ছাড়াই সব কিছু সামলে ফেলতে পারবেন বলে ভাবেন, তাদেরও অনেক সময় বিপদ হয়।
যাদের পরিবার ও বন্ধু পাশে থাকে, মনের কথা খুলে বলতে পারেন, বিপদের মোকাবিলা করার সাহস আছে, সব কিছুর ভাল দিক দেখেন, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, আধ্যাত্মিক চেতনা আছে, তাদের সমস্যা কম হয়।
ভাইরাস অনেক সময় ব্রেনেও ছড়ায়। ফলে মুড সুইং, দোটানা, ও চিন্তাভাবনার অসংগতি বেশ কিছুদিন থেকে যায় অনেকের। কারও হয় অবসাদ। রোগ যত জটিল হয়, পাল্লা দিয়ে বিপদ বাড়ে।
আমেরিকার এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি কভিড রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের আইসিইউ কেয়ার লাগে। তার মধ্যে যতজন বাঁচেন, তাদের প্রায় ৯৬ শতাংশের পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেসের উপসর্গ হয়। এর কারণ, রোগ ও চিকিৎসার প্রবল কষ্ট।
জটিল রোগীদের আইসিইউ-তে যেভাবে চিকিৎসা করা হয়, নাকে-গলায় নল ঢোকানো, ভেন্টিলেটরের সঙ্গে যুক্ত করা ইত্যাদি, তার কষ্ট অমানুষিক। কষ্ট কমাতে কখনো বেশি করে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়।
আছে সামাজিক কারণও: কভিড রোগীরা খুব একা হয়ে যান। সংক্রমণের ভয়ে কেউ তাদের ধারেকাছে যেতে চান না। ফলে রোগের প্রকোপে শরীরে-মনে বিধ্বস্ত রোগীর যে ভালোবাসা ও সেবার দরকার হয়, তা সেভাবে পান না তারা। একটু সেরে ওঠার পর তার সঙ্গে যোগ হয় জীবন-জীবিকার চরম অনিশ্চয়তা, সামাজিকভাবে একঘরে হওয়ার ভয়। প্রবল হেনস্তা।
বিজ্ঞানীদের মতে, এসবের কারণেই সার্স, মার্স, ইবোলা ইত্যাদির মহামারির সময় যত জন পিটিএসডি-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন, কভিডে হচ্ছেন বা হবেন তার চেয়ে আরও অনেক বেশি মানুষ।
সমাধান: কভিডের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কারণ রোগ একবার হলে, তা সে যত মৃদুই হোক-না কেন, এত রকম ধকল সামলাতে হবে যা দুর্বল মনের মানুষের জন্য এক বিরাট চাপের ব্যাপার।
মানসিক সমস্যার সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ কিন্তু নিজে থেকে সারবে না। ফেলে রাখলে পরিস্থিতি জটিল হবে দিনে দিনে।
মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিলে, তিনি কখনোও থেরাপি করবেন, কখনোও ওষুধ দেবেন, কখনও আবার দুটোরও প্রয়োজন হতে পারে।
থেরাপির মধ্যে প্রধান হল কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি। পরিস্থিতিকে যেভাবে দেখার ফলে মানুষটির মনে ভয় ঢুকেছে, তাকে কাটাছেঁড়া করে থেরাপিস্ট ভুলগুলোকে চিহ্নিত করেন। কীভাবে সেই সব ভাবনাকে শুধরে বাস্তবমুখী চিন্তা করতে হবে তা শেখান ধাপে ধাপে।
প্রয়োজন হলে ১২ সপ্তাহ ধরে করা হয় কগনিটিভ প্রসেসিং থেরাপি। সপ্তাহে এক-দেড় ঘণ্টার সেশন। প্রথমে রোগীকে পুরো ঘটনা, মনের ভাব, ভয়ের কারণ খুলে বলতে বলা হয়। তারপর বলা হয় লিখতে। এই লেখার পর্বেই থেরাপিস্টের সাহায্যে রোগী ধীরে ধীরে বুঝে যান, তার সমস্যা কোথায় ও কীভাবে তাকে চলতে হবে।
নিজে নিজে এভাবে মনকে বুঝিয়ে শান্ত থাকতে পারেন।
কারও ক্ষেত্রে করা হয় আই মুভমেন্ট ডিসেন্সিটাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিং থেরাপি। সপ্তাহে একদিন করে তিন মাস। এতে থেরাপিস্টের হাত নাড়ানো, লাইট জ্বালানো বা কোনও বিশেষ আওয়াজের দিকে মন দিতে বলা হয় রোগীকে। কষ্টের বিষয় থেকে মন ঘুরিয়ে অন্যদিকে এনে ফেলাই এই থেরাপির উদ্দেশ্য।
স্ট্রেস ইনকুলেটিং ট্রেনিংয়ে ম্যাসেজ, ব্রিদিং ও অন্য রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজের সাহায্যে কীভাবে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা শেখানো হয়।
এসবে কাজ না হলে দেওয়া হয় ওষুধ। কখনও প্রথম দিকেও দিতে হয়। সঙ্গে দরকার হয় পরিবারের সহযোগিতা।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে