গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহষ্পতিবারে ছাত্রদের সাথে একটি আধা আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আত্মহত্যা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে একজন মনোবৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা, দর্শক এবং ছাত্রদের শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত ব্যায়াম করিয়েছিলেন। এই আধা আনুষ্ঠানিক নৈশভোজটি করা হয় গত বছরে চার জন শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার লক্ষ্যে। একই বছরে চারজনের আত্নহত্যা করার ব্যাপারটি বেশ অস্বাভাবিক, এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানসিক সমস্যায় যারা ভুগছে তাদের জন্য সমর্থন ও আলোচনার আয়োজন করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এসোসিয়েশন’ এর সাথে কাজ করছে। যেন এসোসিয়েশনটি হতে পরামর্শদাতারা আসে, ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনা করে, তাদের পরামর্শ দেয় এবং জরিপ করে যে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মানসিক পরিস্থিতি কেমন। ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে যেন তারা প্রথমেই তাদের মানসিক সমস্যার কথা পরামর্শদাতাদের জানাতে পারে এবং মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই যেন হস্তক্ষেপ করতে পারে।
ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পদক্ষেপকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বৃহষ্পতিবারের নৈশভোজে প্রায় ২০০ টিকিট বিক্রি হয় যার আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক মনস্তাত্বিক সংগঠন।
মিস জেইমস মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কথা বলেন কেননা তার ভাই আত্মহত্যা করেন। দর্শকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমার ভাই আমার পরিবারকে একসাথে রাখার আঠা ছিল। ওর মারা যাওয়ার পর আমি আলাদা হয়ে যাই, আমরা আলাদা হয়ে যাই। আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করি যে আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি দিন আমি ওর সম্মানে বেঁচে থাকব। সেসব মানুষদের সাহায্য করব যারা ওর মত অন্ধকারে ছিল”।
অন্য বক্তারা জোর দিয়ে বলেন যে কারোর উদ্বেগ দূর করা এবং তার ভেতর থেকে আত্মহত্যার চিন্তাকে বের করে আনা তার পরিবার এবং কাছের বন্ধু বান্ধবদের জন্য অনেক সংকটপুর্ণ একটা ব্যাপার। কিন্তু যদি বের করে আনা যায় তবে তা তার জন্য খুবই সাহায্যের একটা ব্যাপার হবে।
মায়মা হাচিসন যার ছেলে ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় আত্নহত্যা করেন তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কীভাবে এত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা ঘটে, এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা কি হতে পারে তা কি একবারো আমাদের মাথায় আসে না! আমাদের কারোর কোন ধারণা নেই যে ঐ ছেলেটা কিসের সাথে যুদ্ধ করছিল, কতটা বাড়তি চাপ সে তার কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আর যদি কেঊ জেনে ফেলে তার প্রতি কেমন পাংশু ধারণার তৈরী হবে।”
কিছু কিছু ছাত্ররা বলে থাকে তাদের বেশিরভাগ চাপ আসে পড়াশুনা থেকে। নম্বরের চাপ, ৪০ অথবা ৬০ শতাংশ পাশ নম্বর, একদিনে একাধিক পরীক্ষা এসব দিকগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ এর একজন সদস্য রয়ি শাবান বলেন, “যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের কোর্স গুলো সাজানো হয়েছে এতে তাদের অবশ্যই বেশি পরীক্ষা নিতে হবে। সাজানোর ধরণ বদলাতে হবে। আমি দেখি যে ছাত্র ছাত্রীরা চেষ্টা করে সব ধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সহকারী সহসভাপতি ড. ব্রেন্ডা হোয়াইটসাইড বলেন, “ কিন্তু যেখানে চাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আগে থেকেই বিদ্যমান অথবা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে সেখানে পড়াশুনা সম্পর্কিত চাপ আত্মহত্যার দিকে ছাত্র ছাত্রী নিয়ে যাবে এই ব্যাপারটি পরিষ্কার নয়।” তিনি আরো বলেন, “ প্রত্যেকটি ঘটনা আলাদা, আপনি বলতে পারেন না যে ছাত্র কিংবা ছাত্রীটি প্রয়োজনীয় সাহায্য অথবা সমর্থন পায়নি অথবা তারা পড়াশুনায় ভাল করতে সক্ষম হচ্ছিল না। আসলে গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্র ছাত্রীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কিত সুবিধা অনেক বাড়িয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে ছাত্র ছাত্রীদের সচেতন করা এবং প্রত্যেক কোর্সে এই ধরণের অধ্যায় যোগ করা।”
২৯০০ ছাত্রছাত্রী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় সচেতনতা এবং বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কিত একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে। এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পিটিশনটি নিয়ে যাচ্ছে। এই বিশেবিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী কনি লি যিনি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকেন তিনি এই পিটিশনটির শুরু করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন এই পিটিশনটি নানাভাবে সাহায্য করছে।
তথ্যসূত্র- দ্যা গ্লোব অ্যান্ড মেইল
(http://www.theglobeandmail.com/news/national/university-of-guelph-seeks-to-reduce-mental-health-stigma/article34206812/)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম