মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে ওঠার অন্যতম সাধন। তাই ফোনের প্রতি আসক্তি কমানোর প্রয়াস করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্ট ফোন ব্যবহার আজ প্রায় সব বয়সী মানুষ, বিশেষ করে শিশু কিশোর ও যুবাদের একটি সাধারণ কাজ বা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দিনে প্রায় সব সময়ই দেখা যায় এসব ব্যক্তিরা অবচেতনভাবেই স্মার্ট ফোন স্ক্রলিং করেই চলেছে। এ যেন ঠিক এক প্রকার নেশার ঘোর।
বর্তমানে শিশু কিশোর বা যুবকরা কারো সাথে কথা বলতে চায় না, কারো সাথে মিশতে চায় না কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেও চায় না। তারা শুধুমাত্র স্মার্ট ফোন স্ক্রল করেই প্রায় সারাদিন কাটিয়ে দেয়।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এমন স্মার্ট ফোন আসক্তিকে ভোগে তাদের সারাদিন অত্যধিক মাত্রায় ডোপামিন নিঃসরণ হয়। আর এর ফলে তাদের চরমভাবে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় এবং তারা বিষণ্ণতা সহ নানা ধরণের মানসিক ও অনিদ্রা, ক্ষুধা মন্দা সহ নানান শারীরিক জটিলতায় ভোগে।
তাই স্মার্ট ফোনকে ডিজিটাল মাদক হিসেবে চিহ্নিত করলেও ভুল হবে না। যা আমাদের সমাজের একটি বড় অংশকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে পঙ্গু করে তুলছে।
নিজেদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে স্মার্ট ফোনের প্রতি আসক্তি কমাবার কোন বিকল্প নেই। কোন ধরণের আসক্তি কখনোই চোখের পলকে দূর হয়ে যায় না। এর জন্য প্রয়াস করতে হয়।
মানসিক ভাবে আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আপনি স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরতে বদ্ধ পরিকর। বিভিন্নভাবে এই প্রয়াস করা যেতে পারে। নিচে কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. ফোনের ব্যবহার বা স্ক্রিন টাইম কমাতে হলে প্রথমে দৈনন্দিন জীবনে আপনি কি পরিমাণ সময় এর পেছনে ব্যায় করছেন সেটি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা আনুন। ঠিক কি কি কারণে আপনি এত বেশী পরিমাণে ফোন ব্যবহার করছেন সেই কারণগুলো চিহ্নিত করুন। দরকার হলে একটি কাগজে সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করে রাখুন।
২. ধরুন, আপনি দিনের ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা ফোন ব্যবহার করেন। তাহলে চেষ্টা করুন প্রতি অন্তত আধ থেকে এক ঘণ্টা কম ব্যবহার করার। ধীরে ধীরে সময় কমিয়ে এনে এটিকে একটি স্বাস্থ্যসম্মত রূপ প্রদান করুন।
৩. নিজেকে ফোন থেকে দূরে রাখতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে অধিক সময় অতিবাহিত করার প্রয়াস করুন। তাদের সাথে গল্প আড্ডায় সময় পার করুন। এতে আপনার মনোযোগ ফোন থেকে অন্যত্র সরে যাবে।
৪. ঘরে একটি পোষ্য রাখা অনেক বদ অভ্যাস থেকে দূরে থাকার একটি কার্যকরী উপায়। এতে মন ভালো থাকে এবং একটি ইতিবাচক উপায়ে সময়টাও কেটে যায়।
৫. নিয়মতি শরীর চর্চাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচরণ অনুশীলনের প্রয়াস করা। এতে আপনার মন স্থির হবে এবং আপনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পর্যাপ্ত মনোবল পাবেন।
এছাড়াও স্মার্ট ফোনের ব্যবহার কমাতে ফোনের নোটিফিকেশন অপশনটি অফ রাখতে পারেন। এতে অন্য কোন কাজ করার সময় বার বার আপনার ফোন আপনাকে জ্বালাতন করবেনা। ফোনটিকে কিছুক্ষণের জন্য লক আপ করেও রাখতে পারেন, যেন ইচ্ছা হলেও হাতের কাছে না থাকায় আপনি সেটি ব্যবহার করতে না পারেন।
এভাবে একাগ্র চিত্তে এবং ইতিবাচক মানসিকতার সাথে যদি প্রয়াস করা যায়, তাহলে অবশ্যই যে কেউ ফোনের প্রতি তার আসক্তি কমাতে সফল হবে।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/play-your-way-sane/202109/the-digital-detox-challenge
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে