সমস্যা: আমার নাম আকলিমা বেগম। আমার স্বামীর নাম সাহেব আলী (৩০বছর)। দুই বছর আগে বাবা-মা আমার বিয়ে দেন। বিয়ের আগে জানতাম না আমার স্বামী একজন মানসিক রোগী। সে ঘুমের মধ্যে কান্নাকাটি করে। ঘুমের মধ্যে কথা বলে এবং মানুষকে গালাগালি করে। আর প্রচন্ড ভয় পায়। কোনো কিছুর শব্দে চমকে ওঠে। কোনো কাজকর্ম করে না। সারাদিন আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। রাতে একা ঘমাতে ভয় পায়। সে একা ঘুমালে নাকি জ্বিন-ভূত এসে তাকে মেরে ফেলবে। অনেক কবিরাজ-দরবেশ দেখিয়েছি। কোনো ফল পাইনি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। সমাধান চাই।
পরামর্শ: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে আপনার স্বামীর বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, তার ঘুমের সমস্যা আছে। আমরা জানি, ঘুমের ধাপ দুটি-রেম স্টেজ এবং নন রেম স্টেজ। আমরা সাধারণত ঘুমের রেম (REM-Rapid Eze Movement) স্টেজ এসব স্বপ্ন দেখে থাকি। ঘুমের সমস্যার বেশকিছু ভ্যারাইটি আছে। এর কিছু রেম স্টেজ- এ, আবার কিছু নন রেম স্টেজ-এ হয়ে থাকে। যেমন, নাইট মেয়ার নামের এক ধরনের রোগ আছে যা রেম স্লিপ-এ হয়। সেক্ষেত্রে রোগী ঘুম থেকে জেগে ওঠে, যা স্বপ্ন দেখে তা মনে করতে পারে এবং আবার ঘুমিয়ে পড়ে। আবার, নাইট টেরর নামক রোগটি নন রেম স্লিপ পর্যায়ে হয়। এক্ষেত্রে রোগী ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে এবং ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে।
ঘুমের আরেকটা ভ্যারাইটি হলো ঘুমের মধ্যে হাটা (Sleep Walking)। আরেক ধরনের সমস্যায় রোগী ঘুমের মধ্যে কথা বলে, চিৎকার করে, কান্নাকাটিও করতে পারে এবং পরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। একে আমরা সুমনামবুলিজম (Somnambulism) বলি। আপনার স্বামীর সম্ভবত সুমনামবুলিজম সমস্যা হতে পারে। যেহেত তিনি ঘুমের মধ্যে কান্নাকাটি করেন, কথা বলেন, গালাগালি করেন। তবে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে পারলে রোগ সম্পর্কে আরো সঠিকভাবে বলা যেত। এই সবগুলোই স্লিপ ডিজঅর্ডারের মধ্যে পড়ে এবং এর চিকিৎসা আছে। বেনজোডায়াজিপিন নামক ঘুমের ওষুধ কিছুদিন খেলে এই সমস্যাগুলো কমে যায়। যেহেত রোগী একা থাকতে চান না, প্রচন্ড ভয় পান, তাই ধারণা করা যেতে পারে উনার সম্ভবত ফোবিয়া আছে। ফোবিয়া এক ধরনের মানসিক রোগ, যেখানে রোগী অহেতুক ভয় পায়, একা থাকতে; এমনকি একা কোথাও যেতেও ভয় পেয়ে থাকে। রোগীর আরেকটা সমস্যা হলো তিনি মনে করেন ঘুমের মধ্যে জ্বিন-ভূত এসে তাকে মেরে ফেলবে। এটা যদি রোগী পরোপুরি বিশ্বাস করেন তাহলে তার মধ্যে ডিলিউশন থাকতে পারে। ডিলিউশন এক ধরনের মানসিক রোগ। এর চিকিৎসা আছে এবং এর জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক ওষধ খেতে হবে।
অতএব বলা যাচ্ছে যে, যদি আপনার স্বামীর স্লিপ ডিজঅর্ডার হয় তবে সেটার চিকিৎসা আছে, ফোবিয়া হলেও চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবে। আবার ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার হলেও তার চিকিৎসা আছে। তবে উনার কাছ থেকে আরো তথ্য জানা জরুরি। শুধু এটকু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় নিকটস্থ কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখালে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কিছু স্পেসিফিক প্রশ্ন করে উনার রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে সঠিক চিকিৎসা করলেই উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. মহাসিন আলী শাহ
অধ্যাপক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৯ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে