আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস যেন মানুষের সব সময়ের সঙ্গী৷ স্ট্রেসে আক্রান্ত হওয়ার নানা কারণ রয়েছে৷ সার্বক্ষণিক মানসিক চাপ ডেকে আনে নানা অসুখ, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত৷
সংসার, বাচ্চা, স্বামী, চাকরি, বস, প্রতিবেশী, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব নানা কারণেই মানুষের জীবনে মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে৷ অন্যকিছুর চেয়ে, মানুষের মধ্যে একে অন্যের সম্পর্কের কারণেই বেশি মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় বলে জানান গ্যোটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গেরাল্ড হ্যুথার৷
আমাদের কি আগের তুলনায় এখন বেশি চাপ? এর উত্তরে মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর সাইকোথেরাপির পরিচালক ফ্লোরিয়ান হোলসব্যোর বলেন, সত্যিকার অর্থে ৮০ থেকে ১০০ বছর আগে মানুষের অনেক বেশি স্ট্রেস ছিল, কাজের ধরণ ছিল অনেক কঠিন৷ ছিল দারিদ্রতা, অসুস্থতা, যুদ্ধ – কত সমস্যা৷ তারপরও কিন্তু সেসময় মানুষ মানসিক চাপ নিয়ে কোনো কথা বলেনি৷
যে কোনো পরিস্থিতিতেই অতিরিক্ত চাপের কারণে কেউ কেউ অল্পতেই রেগে যায়, চিৎকার করে৷ শরীরে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, পেটের নানা সমস্যা৷ আর এসব সমস্যা অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মৃত্যুর কারণও হতে পারে৷
জার্মানির স্বাস্থ্য বিমা টেকনিকা কোম্পানির একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, স্ট্রেসের কারণে শতকরা ৭৩ জন মানুষের কোমরে ব্যথা হয়, ৬৫ জন ক্লান্ত বোধ করেন, ৫২ জনের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় এবং ২৩ জন মানুষ মাথা ব্যথায় ভোগেন৷
ড. হ্যুথার বলেন, অতিরিক্ত চাপ মানুষকে অসুস্থ করে, তবে তা নির্ভর করে কার কতটুকু স্ট্রেস সহ্য করার ক্ষমতা তার ওপর৷ কারো হতে পারে ডায়বেটিস, কারো উচ্চ রক্তচাপ আবার
কারো হয়ত বিষন্নতা বা অন্যকিছু৷ তবে ক্রনিক স্ট্রেস নানা রকম অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷
তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যার কারণেও স্ট্রেসের স্বীকার হয় বহু মানুষ৷ বেশিরভাগই কর্মক্ষেত্রে কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া এবং সহকর্মীদের মবিং-এর কারণে৷
স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার উপায় সম্পর্কে বার্লিনের একটি ক্লিনিকের প্রধান ড. মাজদা আডলি বলেন, সব কিছুকে একটু সহজভাবে গ্রহণ বা নিতে পারা শিখলে ভালো হয়৷ নিয়মিত ব্যায়াম করা, নিজের পছন্দের বা ভালো লাগার কিছু করা৷ অনেকে বলেন, ‘‘সখের জন্য তাদের কোনো সময় নেই৷” এসব ক্ষেত্রে সময় বের করে নিতে হবে৷ তাছাড়া কিভাবে স্ট্রেস পরিস্থিতির সাথে চলতে হয় সে ধরণের বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থাও রয়েছে জার্মানিতে৷