সন্তানকে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বোঝাতে পারেন যেভাবে

0
57
সন্তানকে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বোঝাতে পারেন যেভাবে
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই দরকারি নয় বরং শিশুদেরও তাদের মনকে সুন্দর ও নির্মল রাখা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

যখন কোনো শিশু খেলতে গিয়ে হাঁটুতে ব্যথা পায় তারা বুঝতে পারে তাদের এর জন্য চিকিৎসা দরকার। একইভাবে শরীরের যেকোনো অংশে ব্যথা পেলে তারা এর থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা টের পায়। কিন্তু যখন কোনো শিশু মানসিকভাবে আঘাত পায়, তারা হয়তো বুঝতে পারে না তাদের শরীরের পাশাপাশি মনেরও চিকিৎসা দরকার।

শিশু ও কিশোর মনোবিজ্ঞানী এবং ‘হ্যাপি কিড হ্যান্ডবুক: হাউ টু রাইজ জয়ফুল চিলড্রেন ইন আ স্ট্রেসফুল ওয়ার্ল্ড ’ -এর লেখক কেটি হার্লি এ ব্যাপারে বলেন, “একটি বাচ্চা মাধ্যমিক স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে ভর্তি হতে যায় তখন তাদের মধ্যে নানান দুশ্চিন্তা দেখা যায় ।”

বাচ্চাদের কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন করা যায়- এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানীরা পাঁচটি চমকপ্রদ উপায় বলেছেন। এগুলোর মাধ্যমে বাচ্চাদের বোঝানো যাবে যে শরীরের পাশাপাশি তাদের মনেরও যত্ন নেয়া কতটা জরুরি এবং মনকে সুস্থ রেখে কিভাবে উজ্জীবিত ও সুন্দর জীবন পাওয়া যায় ।

‘ইমোশনাল ভলকানো’ পদ্ধতি :
‘ইমোশনাল ভলকানো’ নিয়ে কয়েকজন শিশু ও তাদের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করেন কেটি হার্লি। তিনি তাদেরকে বোঝান, ‘সকলেরই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা হয়। যেসব চিন্তাভাবনা প্রকাশ করা জরুরি তা যদি প্রকাশ না পায় সেটা আস্তে আস্তে মনের ভেতর জমা হতে থাকে। এভাবে যখন মনের উপর অত্যধিক চাপ পরে তখন ভলকানো বা আগ্নেয়গিরির মতো অগ্নুৎপাত ঘটে, যা আমাদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে ।’
সুতরাং, বাচ্চাদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও উচিত এই ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং পরস্পর খোলাখুলি ভবে মনের কথা বলার সুযোগ করে দেয়া।

বাস্তব উদাহরণ থেকে শিক্ষাগ্রহণ এবং অভ্যাস সচেতনতা:
গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত গেমিং ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যধিক সময় ব্যয় করা আমাদের আচরণ, মানসিক স্বাস্থ্য ও ঘুমে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ধরনের খারাপ অভ্যাসগুলো পরিহারের জন্য অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু নিয়ম করে দিতে পারেন যেমন : খাবারের সময় টেবিলে মোবাইল ব্যবহার না করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ও খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি। এছাড়া, পরিবারের বড়রা তাদের তিক্ত ও ভালো দুই ধরনের অভিজ্ঞতাই বাচ্চাদের সাথে শেয়ার করে তাদের ওইসব বিষয়ে আগে থেকেই সচেতন করে দিতে পারেন।

বাচ্চাদের শারীরিক ভাষা পর্যবেক্ষণ :
ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানী রাচেল বুসমান বলেন, ‘বাচ্চাদের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দেখেই আগে আগে নিজে থেকে কিছু না বুঝে মা-বাবার উচিত তাদের বাচ্চাদেরকে সমস্যাগুলো নিজ মুখে বলার সুযোগ করে দেয়া ।’
তিনি ব্যাপারটাকে এভাবে বুঝিয়েছেন যে, ‘কোনো বাচ্চা দুশ্চিন্তায় পড়েছে বুঝতে পারলে বাবা-মায়ের উচিত ‘দুশ্চিন্তা করো না’ -এরকম কথা না বলে ‘তোমাকে এরকম লাগছে কেন? কিছু হয়েছে? বলতে চাও আমাকে কিছু?’ এভাবে কথা বলা।’

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার কৌশল শেখানো :
মল্লিকা চোপড়া, যিনি একজন লেখক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আধ্যাত্মিক নেতা দীপক চোপড়ার কন্যা। ৯ বছর বয়সে ধ্যান করা শিখেছিলেন তিনি। ধ্যান করাকে তার জীবনে ‘বিশেষ গিফট’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
তার লেখা ‘জাস্ট ব্রেথ: মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস, মুভমেন্ট, অ্যান্ড মোর’ বইতে তিনি ধ্যান করার উপকারিতার পাশাপাশি তুলে ধরেন সঠিকভাবে হাঁটা ও যোগব্যায়ামের মতো বিভিন্ন পরামর্শ।দৈনন্দিন প্রয়োজনে আপনার কি ধরনের শব্দ ব্যবহার করে কথা বলা উচিত তারও পরামর্শ দেন।

জার্নাল-এর প্রতি উৎসাহী করা :
ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার মেডিকেল সেন্টারের মতে, ‘জার্নালিং মানসিক চাপ কমায় এবং দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।’ বাৎসরিক ও মাসিক কিছু ম্যাগাজিনে বাচ্চাদের সমস্যা সাবলীলভাবে বলার জন্য এবং এর থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে কিছু কলাম করা যেতে পারে। সেসব সমস্যা নিয়ে পরবর্তীতে তাদের শিক্ষক, পিতামাতার সাথে আলোচনাও করা যেতে পারে।

কোনো বাচ্চা কী ধরনের সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কোন বিষয়টি তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তুলছে এসব ব্যাপারে তারা ম্যাগাজিনে লিখে তাদের বাবা-মাকে জানাতে পারবে। আবার কেউ তাদের সমস্যা থেকে সমাধান কিভাবে পেলো ওই অভিজ্ঞতাও লিখে আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে অন্য বাচ্চাদেরকে।

এক কথায় বাচ্চাদের প্রতি মা-বাবার দায়িত্ব অনেক বেশি এবং এই দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রে কোনো ভুল করার সুযোগ নেই। তাই নিজ বাচ্চার শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা যাতে বজায় থাকে তা দেখভাল করার মূল দায়িত্ব মা-বাবারই। মাথায় রাখতে হবে, কোনো বাচ্চাই জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সব শিখে আসে না। আর তাই তাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleআপনি বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন
Next articleদাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত করবেন যেভাবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here