জীবনের প্রথম বছরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রথম তিন থেকে পাঁচ বছর। এই বছরগুলোতে দ্রুত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ, স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়ন ও মাইলিনেশন হয়। এই সময়টাতে শিশুর মস্তিষ্কের ওজন বয়ষ্কদের মস্তিষ্কের ওজনের ২৫ শতাংশ। তাই জীবনের প্রথম বছরগুলোর যত্ন ও ভালবাসা অত্যন্ত জরুরি এবং তাদের সারা জীবনের উপর প্রভাব ফেলে| শিশুর মানসিক বিকাশ নির্ভর করে তার আশেপাশের পরিবেশ ও অন্যদের আবেগপূর্ণ আচরণ দ্বারা। শিশুর পিতা-মাতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের উপর নির্ভর করে শিশুর আবেগ, অনুভূতিসহ অন্যান্য মানসিক বিকাশ।
তাই ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য বেড়ে ওঠা এবং মানসিক বিকাশের ভিত্তি শিশুকালের প্রথম আট বছর। এই সময়ে শিশুরা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে তাড়াতাড়ি শেখে। বাচ্চারা তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে ও তাড়াতাড়ি শেখে যদি তারা ভালবাসা, দেখাশোনা, উত্সাহ এবং মানসিক উদ্দীপনা পায় এবং তার সাথে পুষ্টিকর খাদ্য এবং সুস্বাস্থ্য ব্যবস্থা অতীব জরুরি।
স্পর্শ, গন্ধ এবং দৃষ্টি হচ্ছে শিশুর শেখার হাতিয়ার, যা দিয়ে সে তার চারপাশের দুনিয়াতে খোঁজে। শিশুদের সাথে কথা বললে, স্পর্শ করলে, জড়িয়ে ধরলে বা যখন ওরা পরিচিত মুখ দেখে, পরিচিত গলা শোনে এবং বিভিন্ন জিনিস নাড়াচাড়া করে, ওদের মন বিকশিত হয়। ওরা, ভালবাসা ও নিরাপত্তার অনুভূতি পেলে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে মেলামেশা করলে তাড়াতাড়ি শেখে। সুস্থ্ পরিবেশ শিশুকে সুস্থ্ রাখে।
যে সব শিশুরা নিরাপদ বোধ করে তারা পরবর্তী জীবনে সহজেই বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে ভাল করে মানিয়ে নেয়। শিশুর শারীরিক বা মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি| যদি শিশুর বিকাশ সঠিক ভাবে না হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। মনে রাখতে হবে যে, মাকে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ্ থাকতে হবে শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে। সুস্থ্ মা-ই শিশুকে সুস্থ্ রাখতে পারেন।
জন্ম থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত
শিশুর যা সাধারণত পারা উচিতঃ
● গালে বা মাথায় হাত বোলালে সেদিকে মাথা ঘোরানো
● উভয় হাত মুখের দিকে আনা
● পরিচিত গলার আওয়াজ বা শব্দ শুনলে সেদিকে ঘোরা
● স্তন চোষা এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া
শিশুর জন্য সাধারণত করণীয়ঃ
● বাচ্চাকে এমনভাবে ধরুন যাতে চামড়ার সাথে চামড়ার সংস্পর্শ হয় এবং জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ান।
● প্রায়ই বুকের দুধ খাওয়ান, অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর।
● যতবার সম্ভব বাচ্চার সাথে কথা বলুন, কিছু পড়ুন বা গান করুন।
● হাসিমুখে বাচ্চার সাথে ভাবের আদান-প্রদান করুন।
● বাচ্চাকে যখন খাড়া করে ধরবেন মাথায় সাপোর্ট দিন।
● প্রায়ই বাচ্চাকে মাসাজ্ করুন এবং জড়াজড়ি করে আদর করুন।
● সবসময় বাচ্চাকে মৃদুভাবে ধরুন ক্লান্ত বা অশান্তি থাকলেও।
যে সব সংকেত লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
● দুর্বলভাবে স্তন চোষা বা চুষতে আপত্তি করা।
● জোরে আওয়াজ বা উজ্জ্বল আলোয় কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়া।
● অনেকক্ষণ ধরে কান্না।
● বমি ও পায়খানা, যার ফলে শরীরে জলের ভাগ কমে যেতে পারে।
পিতা-মাতা ও যত্নকারীদের প্রয়োজনীয় পরিমাপ-ফলক জানা দরকার, যা জানাবে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বা মানসিক বিকাশ হচ্ছে কীনা। শিশুর কোন বয়সে কোন খাবার বেশি দরকার তা জানাও খুব জরুরি। ওদের এটাও জানা দরকার যে, কখন সাহায্য চাইতে হবে এবং কী করে শারীরিক বা মানসিকভাবে অসমর্থ শিশুর জন্য যত্ন ও ভালবাসার পরিবেশ তৈরি করা যাবে। এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি শিশুকে সুস্থ্ রাখতে পারে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।