যদি আপনার আঙুল কেটে যায় তাহলে কীভাবে আপনি সেই কাটা জায়গার যত্ন নেবেন? প্রথমে আপনি ওই আঙুলটা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। তারপর সেই কাটা জায়গায় অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগিয়ে ব্যান্ডএইড্ বেঁধে রাখবেন যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। এভাবেই শরীরের কোনও জায়গায় কেটে গেলে বা আঘাত লাগলে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। একইভাবে মনের আঘাতের জন্যও প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। একে বলে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত প্রাথমিক চিকিৎসা।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে একজন মানুষের সম্ভাব্য মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যুক্ত থাকে মানুষের অনুভূতিগত এবং আচরণগত সমস্যার লক্ষণগুলি চিহ্নিত করা ও প্রয়োজন মতো একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রবণতা। অসুস্থতা শারীরিক বা মানসিক যাই হোক না কেন, তা যদি একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায় তাহলে সেই অসুখ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল।
কাদের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়?
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্যের দরকার এমন মানুষের ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা একান্ত জরুরি। একজন মানুষের অনুভূতিগত সমস্যার জন্য অনেক কারণ দায়ী থাকে, যেমন – সন্তানের নতুন স্কুলে যাওয়া, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক ভেঙে গেলে, কাজের জন্য কর্মীদের নতুন কোনও জায়গায় বা শহরে যাওয়া, প্রিয়জনকে হারানো, চাকরি চলে গেলে, অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মুখোমুখি হওয়া ইত্যাদি। কোনও মানুষের জীবনে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটলে তা থেকে তার মানসিক চাপ, ভয় এবং উদ্বেগ হতে পারে। এই সমস্যাগুলি যদি আগেভাগে চিহ্নিত করা না যায় তাহলে কিন্তু পরে তা থেকে মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। সেই জন্য এইসব বিপদ থেকে বাঁচতে এবং তা থেকে আরও ক্ষতির সম্মুখীন না হওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
প্রাথমিক চিকিৎসার সাহায্যে কিন্তু মানুষের মানসিক অসুখ নির্ণয় করা বা তা থেকে উদ্ধার পাওয়া অথবা কাউন্সেলিং এবং থেরাপির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।
একজন মানুষের যে মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে তা কীভাবে বোঝা যায়?
এমন একজন অজ্ঞ মানুষ, যার মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোনও জ্ঞানই নেই, সে কিন্তু তার কাছের মানুষের মানসিক সমস্যার সমাধানে কোনও সাহায্য করতে পারবে না। কিন্তু যে মানুষ নানারকম মানসিক এবং অনুভূতিগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে সে অন্য একজনের আচরণ, চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতির দিক থেকে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে তার মানসিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে ধারণা করতে সক্ষম হবে। এহেন অস্বাভাবিকতাগুলি হল-
- সহজেই কেঁদে ফেলা
- ভীষণ চিন্তাভাবনা করা এবং অস্থির হয়ে পড়া
- মারমুখী ও খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- সমাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া
- স্কুল, কলেজ বা কাজের জায়গায় যেতে না চাওয়া
- নিজেকে দোষারোপ করতে শুরু করা
- অপরাধবোধে ভোগা
- হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া
- নিজেকে অসহায় বলে মনে করা
অনেকসময়েই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধানে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। আবার প্রায়শই দেখা যায় যে, একজন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি অন্য কারোর কাছ থেকে সহানুভুতিশীল ব্যবহার ও সমর্থন চাইছে।
কীভাবে আপনি মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা করবেন?
যদি আপনি দেখেন কারোর মধ্যে কোনওপ্রকার আবেগজনিত অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাহলে তার সঙ্গে আপনার জোড়ালোভাবে কথাবার্তা বলা দরকার। নিজের মতামত না দিয়ে তার সঙ্গে এমনভাবে কথপোকথন করা উচিত যা গোপন থাকে।
যদি কেউ আপনার কাছ থেকে সাহায্য চায় তাহলে আপনি কী করবেন:
- তাদের চিন্তাভাবনার জন্য তাদেরকে দোষরোপ না করা (যেমন- আত্মহত্যাজনিত চিন্তাভাবনা)।
- তাদের অনুভূতিগুলিকে যুক্তি দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করা জরুরি।
- নিজে থেকে সমাধান সূত্র দেওয়ার চেষ্টা না করে মানুষকে সমাধান খুঁজতে সাহায্য করা প্রয়োজন।
- মানুষের সাহায্যে লাগে এমন ব্যবস্থা খুঁজে বের করা।
- মানুষকে তার সমস্যা নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করার জন্য জোর না দেওয়া। এক্ষেত্রে সীমা মেনে চলা জরুরি।
যদি আপনি বোঝেন যে কারোর মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা দেখা দিচ্ছে বা কোনও ক্ষতিকারক বস্তুর প্রতি আসক্ত হওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে তাহলে অবিলম্বে তাকে একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে