মানুষ যদি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো নির্দ্বিধায় বলতে পারে, তাহলে অন্যরাও সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
সম্প্রতি টোকিওতে আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারী একজন অ্যামেরিকান জিমন্যাস্ট গোল্ড মেডেল প্রাপ্তির দৌঁড় থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিয়েছেন। আর এটি তিনি করেছেন তার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকার জন্য। তার মনোযোগ ছিল তার অনুভূতির উপর অর্থাৎ তার মানসিক অবস্থার উপর। যা হয়তো বাইরের পৃথিবীর মানুষের কাছে ছিল একদমই অজানা।
এভাবে এমন আরও অনেক সাহসী প্রতিভাবান মানুষেরা রয়েছেন, যারা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা গুলোর কথা অকপটে স্বীকার করেছেন, জন সচেতনতা বাড়িয়েছেন এবং একই সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে করণীয় নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে নিজের জিবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
এভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ও এর উপর মাদকাসক্তির কু-প্রভাব নিয়ে যদি সবাই তাদের অভিজ্ঞতার কথা খুলে বলে তাহলে অন্যদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে।
মহামারী আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। মহামারীকালীন সময়ে আমাদের মাঝে যেমন ভালো অভ্যাস গড়ে উঠেছে, তেমনি অনেকের মাঝে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
অনেকেই আছে যারা মহামারী নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই অস্বাভাবিক অবস্থায় মানসিক চাপের শিকার হয়ে মাদকাসক্তির মত কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে যেমন তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও পড়ছে চরম ক্ষতির মুখে।
এক দিকে মহামারী তার নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে মাদকাসক্তির মত বিষয়গুলো বৃদ্ধি পেয়ে সেই প্রভাবকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই মহামারীর এই দুঃসময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও মাদকাসক্তির মত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এই লক্ষ্যে যারা এর ভুক্তভোগী তারা যদি এগিয়ে আসে এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথা ও মাদকাসক্তির নেতিবাচক প্রভাবের কথা খুলে বলে তাহলে মহামারী কালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে করণীর সম্পর্কে মানুষ সচেতন হবে। একই সাথে মাদকাসক্তি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে অনুপ্রাণিত হবে।
আমাদের সমাজে কখনোই একজন মাদকাশক্ত ব্যক্তিকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এছাড়া যারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছেন, নিজেদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তাদের বিষয়েও নেতিবাচক মানসিকতাই প্রদর্শন করে।
এ কারণে অনেকেই মাদকাসক্তি নিয়ে নিজেদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা বলতে দ্বিধান্বিত বোধ করেন আবার অনেকে অসম্মানিত বোধ করেন। তাই সমাজের স্বার্থে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মাদকাসক্তির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সবাইকে সচেতন করতে হলে মানুষের মনোভাব পরিবর্তন অত্যন্ত আবশ্যক।
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে অপমান না করে, দূরে ঠেলে না দিয়ে বরং তাকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ প্রদান করার মানসিকতা ধারণ করতে হবে। আর যারা সুস্থ জীবনে ফিরতে পেরেছে তাদেরকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
সমাজ ও নিজেদের স্বার্থে মাদকাসক্তির কু-প্রভাব ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সবাইকে মাদকাসক্তির কু-প্রভাব সম্পর্কে জানাতে হবে। তাহলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে