মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মানুষ হতাশায় ভোগে। এদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অধিবাসীরা বেশি মাত্রায় হতাশায় ভোগে। মধ্যপ্রাচ্যের আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং উত্তর আফ্রিকার নাগরিক অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি হতাশা ও উদ্বিগ্নতায় ভোগে। পাবলিক লাইব্রেরী অব সায়েন্স এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
সে তুলনায় এশিয়া মহাদেশের মানুষ কম মানসিক রোগে ভোগে বলে জানান তারা। গবেষণায় বিশ্বব্যাপী হতাশা জনিত কারণে মৃত্যূবরণকারী মানুষের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, আফগানিস্তান এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশের মানুষ হতাশাজনিত কারণে বেশি হারে মারা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভারসিটি অব কুইন্সল্যান্ড এর অধ্যাপক ও গবেষক এলিজ ফেরারি জানান, “বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগের ক্ষেত্রে শুধু আমরা হতাশাজনিত রোগকেই প্রাধান্য দিচ্ছি না বরং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে হতাশার মাত্রা এবং তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা এ জরিপটি করেছি।”
তিনি বলেন, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যুদ্ধ সংঘর্ষ বেশি থাকায় সেখানকার মানুষ বেশি মানসিক চাপ এবং হতাশায় ভোগে।
আর্ন্তজাতিক মেডিকেল কর্পস (IMC) বলছে, সাম্প্রতিককালে সিরিয়ায় যে সংঘর্ষ চলছে তাতে দেশেটিতে মানসিক রোগীর সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। আর লেবাননে ৮ লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছে যাদের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে আতঙ্ক, হতাশা আর মানসিক চাপের মাত্রা বেড়ে গেছে।
সংগঠনটির মতে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হতাশা ও মানসিক চাপে মানুষ ভুগলেও মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশগুলোতে এসব রোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা দ্রূত বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে অনেক সিরীয় নাগরিক জীবন বাঁচাতে পাড়ি জমাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। এতে মানসিক রোগগ্রস্থ ব্যক্তিরা পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ায় তাদের মানসিক অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। আর যারা নিজ দেশে সুস্থ ছিলো তারাও দেশ ছেড়ে চলে আসায় হতাশায় ভুগছে।
গবেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যক্তি দীর্ঘদিন বেঁচে থেকে শেষ বয়সে হতাশা ও মানসিক চাপে ভোগার কারণে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘাতক ব্যাধি এইডস ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চেয়ে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেশি হারে বাড়ছে।
রিফিউজিদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অন্যতম সংগঠন United Nations High Commission for Refugees (UNHCR) এর তথ্য মতে, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তা নিয়ে তারা রিফিউজিদের মধ্যে মানসিক রোগগ্রস্থ ব্যক্তিদের যে চিকিৎসা সেবা দেন তাতে অতি কম সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা সেবা পান।
মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপে যে হারে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে মনে করেন গবেষকরা। তাই যুদ্ধ সংঘর্স বন্ধসহ মানসিক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়।
সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর
ফারুক হোসেন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম
লক্ষ্য করুন- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।