গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি বর্তমানে একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আমরা সবাই এই সমস্যাগুলি নিয়ে কম বেশি চিন্তিত। একটু একটু করে প্রতিনিয়ত পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ছে এবং এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সৃষ্টি করছে নানা ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। লক্ষ কোটি বছরের জমে থাকা বরফ ধীরে ধীরে গলে বৃদ্ধি করছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা।
তাছাড়া প্রতি বছরই বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ২৫,০০০০ মানুষ প্রায় প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা যেমন- জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খাবার পানির সংকট, অপুষ্টি, মহামারী, ডায়রিয়া, হিট স্ট্রেসসহ নানা ধরণের সমস্যায় প্রাণ হারাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগই বৃদ্ধি পাচ্ছেনা সাথে সাথে বাড়ছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ২৫-৫০ শতাংশ মানুষ, যারা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলির শিকার, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে নিদ্রাহীনতা, বিরক্তি, মানসিক উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা ইত্যাদি। ২০০৫ সালে হ্যারিকেন, ক্যাট্রিনা আঘাত হানার পর প্রায় ৪৯ শতাংশ ভুক্তভোগীদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এমনকি অনেকের মধ্যে ছিল পিটিএসডি এর মতো মানসিক সমস্যা। তাছাড়া নতুন নতুন মানসিক সমস্যা সৃষ্টির সাথে সাথে যারা আগের থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন তাদের মধ্যে এই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।
২০১৭ সালে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন মানসিক আঘাতের একটি অন্যতম উৎস যা অতি সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে। এ ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে বিশেষজ্ঞরা ‘ইকো এংজাইটি’ নামে অভিহিত করেছেন যা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। এ ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি সাধারণত মানুষের মধ্যে মনোবলের অভাব, হতাশা, সামাজিক ও আর্থিক অসহায়ত্ব থেকে সৃষ্টি হয়।
এ ধরণের মানসিক সমস্যা এড়াতে শুধুমাত্র আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে তাই নয় বরং জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দিতে নিতে হবে দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ যা আমাদেরকে সার্বিক সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। যাদের মাঝে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেসব সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুরক্ষার ভয় জয় করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে পুনরায় তাদের মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল প্রদান করতে হবে। তাদের মাঝে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য যেমন ভালো রাখা জরুরী তেমনি এই পৃথিবীটাকেও আমাদের সবার ভালো রাখতে হবে। পৃথিবী সুস্থ থাকলেই আমাদের দীর্ঘস্থায়ী ভালো থাকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সাইকসেন্ট্রাল থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে