কলেজ পড়ুয়া ১৯ বছরের সদ্য বিবাহিতা মেয়েটির স্বামী বিয়ের কয়েক দিন পরই চাকরি সুবাদে বিদেশে পাড়ি জমায়। তার কিছু দিন পর হঠাৎ করেই একদিন মেয়েটি তার শ্বশুর বাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই মেয়েটি ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যেত, পাশাপাশি খিঁচুনিও দেখা দেয়।
এ সমস্যার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে নানা নিরীক্ষায়ও যখন দৃশ্যমান কোনো শারীরিক রোগ ধরা পড়েনি, সব পরীক্ষার ফলাফল যখন স্বাভাবিক আসে এবং বলা হয় এটি একটি মানসিক রোগ, তখন চিকিৎসকদের সব উপদেশ অমান্য করে পরিবারের সদস্যরা তাকে জোরপূর্বক বাড়ি নিয়ে যায়। তারা নিজেরাই নির্ণয় করে যে, মেয়েটির রোগের নাম ‘উপরী’। আর এজন্য ডাক্তারি চিকিৎসার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা একটা খারাপ বাতাস লাগার ফলস্বরূপ দেখা দিয়েছে।
যেমন নির্নয় তেমন চিকিৎসা। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তাবিজ আর পানি পড়া জাতীয় অপচিকিৎসার অধীনে, ঠেলে দেওয়া হয় অন্ধকারে।
আসলে গল্পটা শুধু এ মেয়েটির না, তা আামাদের সমাজের একটা অতি পরিচিত দৃশ্য। বর্তমানে আমাদের সমাজে মানসিক রোগীর চিকিৎসা সেবাদানে সবচেয়ে বড় অন্তরায় মানসিক রোগ ও তার চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাস, ভুল ধারনা, কুসংস্কার আর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়াও রয়েছে প্রয়োজনীয় রেফারেল ব্যবস্থার ঘাটতি। সাধারণ মানুষ এখনও মানসিক রোগকে রোগ মনে না করে অভিশাপ, বান দেওয়া, বাতাস লাগা নানা অভিধায় আখ্যায়িত করে এবং তার প্রতিকার হিসেবে তাবিজ, পানি পড়া, তেল পড়া জাতীয় অপচিকিৎসার দ্বারস্থ হয়।
কিছু মানসিক রোগের আবার শারীরিক উপসর্গও থাকে। তাদের ভান ধরা হিসেবে চিহ্নিত করে দিনের পর দিন অবহেলা করা হয়। মানসিক চাপ অথবা দ্বন্দ্বের জন্য যে শারীরিক উপসর্গ হতে পারে, তা মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা এখনও আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষেরই হয়নি। আর যদিও বা কেউ কেউ মানসিক রোগকে রোগ মনে করেন, তারপরও তারা নানা সামাজিক কারণে কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে অনিচ্ছুক থাকেন। ফলে এসব রোগী মানসিক প্রশান্তি তথা সুস্থতার পরিবর্তে অন্ধকারেই থেকে যায় দিনের পর দিন।
কাজেই যত দ্রুত সম্ভব সব ভ্রান্ত ধারণা দূরে ঠেলে মানসিক রোগ ও তার শারীরিক উপসর্গ সম্পর্কে জানা উচিৎ। ব্যক্তি, পরিবার তথা সমাজের মঙ্গল কামনায় কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে, একজন মানসিক রোগীকে অপচিকিৎসার কবল থেকে মুক্ত করে অন্যান্য রোগীর মতো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার বিকল্প আার কিছুই নেই। সব মানসিক রোগীরই অধিকার আছে সুচিকিৎসা ও আলোকিত জীবনের পরশ পাওয়ার।
চলবে…
মানসিক রোগের শারীরিক উপসর্গ : পর্ব-২
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।