কোভিড-১৯ ধীরে ধীরে আমাদের কঠিন এক অস্তিত্ব হীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের সাথে ঠিক হতে চলেছে এবং আদৌ আমাদের কোন ভবিষ্যৎ আছে কিনা এসব নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতাই এই অস্তিত্ব শঙ্কার মূল কারণ।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে,আমরা যদি এই মহামারী মোকাবেলা করতে চাই এবং ভবিষ্যতে সুস্থ ও সুন্দর জীবনে ফিরতে চাই তাহলে অবশ্যই সর্বাগ্রে আমাদের এই শঙ্কা থেকে মুক্ত হতে হবে।
বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী এখনো আমাদের একইভাবে তাড়িত করছে। এর কোন কার্যকরী প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার না হওয়ায় এবং সমান ভাবেই এর সংক্রমণ এবং প্রকোপ বহাল থাকায় আমরা কোনভাবেই দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারছিনা। আমরা সবাইই আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবন নিয়ে যেমন হতাশাগ্রস্ত তেমনি ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
আমাদের এই গৃহবন্দী জীবনের শেষ কোথায় আমরা জানিনা। স্বাভাবিক জীবনে আমরা কবে ফিরতে পারবো বা আদৌ ফিরতে পারবো কি না সেসব নিয়ে দেখা দিয়েছে এক চরম ধোঁয়াশা। নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষার জন্য যা যা করছি তা পর্যাপ্ত কিনা বা এভাবে কতো দিন আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারবো সেসব নিয়ে ক্রমশ দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এর শেষ কোথায়- এই একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজেই যেন আমরা হয়রাণ এবং এর সদুত্তর আমাদের কারও কাছেই নেই।
আমাদের চারপাশের পরিবেশ এবং আমাদের অভ্যাস গুলো দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আমাদের জীবনটা প্রতিনিয়ত ভার্চুয়ালিটি নির্ভর হয়ে পড়ছে। আমরা কি ছিলাম এবং প্রতিনিয়ত আমরা ঠিক কীসে পরিণত হচ্ছি এসব নিয়ে আমরা বড়ই সন্দিহান। এসব কারণে আমাদের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে এক তীব্র অস্তিত্ব শঙ্কা। আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটি নিয়ে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত কারণ আমরা নিজেদের অস্তিত্বকেই হারাতে বসেছি যা করোনা থেকেও অধিক ভয়াবহ।
করোনা ভাইরাস আমাদের কারও একার পক্ষে চোখের নিমিষেই ভ্যানিশ করে দেওয়া সম্ভব নয়। কার্যকরী প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত আমাদেরকে সুরক্ষা ব্যবস্থা বহাল রেখেই সব কাজ করতে হবে। তবে এটাকেই সব কিছুর শেষ ভেবে নিলে এটাই হবে আমাদের চরম হার যেখানে আমরা আমাদের অস্তিস্ব হারিয়ে করোনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে এক বিভীষিকাময় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ইতিবাচক মানসিকতাকে আমাদের জাগিয়ে তুলতে হবে। খুঁজে পেতে হবে আত্মবিশ্বাস।
মনে রাখতে হবে চেষ্টা করলে সব কিছু সম্ভব। কিন্তু চেষ্টা ছেড়ে সব কিছু মেনে নিলে আমাদেরকে যে ভয়াবহ প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হবে সেটা হবে আমাদের নিজদেরই কর্ম ফল। করোনাকে আমরা সেজন্য দায়ী করতে পারব না। আমাদের মনে রাখা আবশ্যক যে আমাদের এই পরিবর্তিত আচরণ কেবল করোনা মোকাবেলার স্বার্থে আমাদের প্রতিক্রিয়া। কখনোই একে চিরস্থায়ি হিসেবে ভাবার মত ভুল করা যাবেনা। করোনার কাছে নিজেদের অস্তিত্ব হারালে চলবে না। বরং আমাদের অস্তিত্বের কাছে হার মানবে করোনা। এটাই সত্যি যে সমস্যা আমাদের কাজে বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নয়। বরং সমস্যা আমাদের মন মানসিকতায়, আমাদের চিন্তাভাবনায়। আমাদের চিন্তাভাবনাই আমাদের দুশ্চিন্তা এবং অস্তিত্ব শঙ্কার জন্য দায়ী। করোনা নয়।
করোনা ভয় অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু সেটিকে এতোটা বাড়িয়ে দিলে চলবে না যে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়েই লড়াই করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলবো। আমরা অবশ্যই টিকে থাকবো এবং যুগে যুগে আসা অন্যান্য মহামারীর মত করোনাও এক দিন বিলুপ্ত হবে। আমাদেরকে মানসিকভাবে সজাগ থাকতে হবে। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে, তবে সেটি অস্তিত্ব হারিয়ে নয়। বরং করোনা থেকে উৎপন্ন সকল সমস্যাকে ইতিবাচক ভাবে মোকাবেলা করে করোনার অস্তিত্বকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে যেতে হবে। আর এটি তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা মানসিকভাবে দৃঢ় থাকবো।
অনুবাদ: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে