তখন বয়স মাত্র ১৬ -১৭ হবে। ১৯৯৭ সালে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, কয়েক বন্ধু মিলে ঘুরাঘুরির নেশায় চলে গেলাম তাবলীগ জামাতে ৪১ দিনের চিল্লায়। কাকরাইল মসজিদ হতে আমাদের পাঠানো হলো শেরপুরের ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে। খুবই সুন্দর জায়গা আমাদের মনের ইচ্ছা পূরণ হলো।
ঢাকা থেকে যেতে যেতে প্রায় বিকাল হলো। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাযের জন্য জামাতে দাঁড়িয়েছি হঠাৎ তখন মাথায় চিন্তা আসলো আল্লাহ নেই,হ্যাঁ আল্লাহ নাই। আকষ্মিক এ চিন্তা মাথায় আসায় আমি বিচলিত হয়ে পড়লাম আমার মাথায় এমন চিন্তা আসছে কেন? যতই আটকাতে চাচ্ছি ততই বেশি আসছে ,কোনভাবেই আটকাতে পারলাম না। এমন অযৌক্তিক চিন্তা মাথায় আসায় নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। এভাবেই সৃষ্টিকর্তা,ধর্মীয় পুস্তক ,হাদীস কোরআন সব বিষয়ে অবিশ্বাস ও দ্বিধাদ্বন্ধ হতে থাকলো। যার ফলশ্রতিতে হাসিখুশি প্রাণবন্ত ছেলে আমি একদম ভেঙ্গে পড়লাম। আস্তে আস্তে নেগেটিভ চিন্তা বাড়তে লাগলো,এবং এত নোংরা চিন্তা আস্তে লাগলো যা কাউকে বলার অযোগ্য ,যৌন ইমেজ এবং আগ্রাসি মনোভাব সহ এত বাজে বাজে চিন্তা যার ফলে নিজেকে অভিশপ্ত মানুষ মনে হলো। ফেরাউন নমরুদ এদের চাইতেও আমি খারাপ এবং আমিই একমাত্র মানুষ এ পৃথিবীতে যার এমনটা হয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমার জন্য মনে মনে বিড়বিড় করে তওবা করতাম সবসময়।
এমনটা দীর্ঘদিন চলতে থাকে এক পর্যায় কমে যায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও করতে পারি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বৈবাহিক সম্পর্কের তিন মাসের মাথায় স্ত্রী নিয়ে সন্দেহ জাগতে থাকে যে সে মনে হয় অন্য ধর্মের কোন মানুষের সাথে প্রেম করেছে এবং এক পর্যায় এটার সাথে ১৯৯৭ সালের সেই চিন্তাগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসলো। চিন্তাগুলো এত কষ্টের যে আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। এত কষ্ট এবং ডিপ্রেশণের ফলে মৃত্যু কামনা ও সুইসাইডের তাড়ণা আসতে লাগলো। পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনের পীর ফকিরের দ্বারা ঝাড়ফুঁক করানো আরো অসহ্য লাগতে লাগলো।
এরই মাঝে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ঢাকা যাই এবং শাহবাগ মোড়ে পত্রিকার স্টলে “মনের খবর” নামক একটি ম্যাগাজিনে চোখ আটকে যায় নামের কারণে। সঙ্গে সঙ্গে ক্রয়করে পড়তে শুরু করলাম এবং সন্ধান পেলাম আমার সমস্যাটা একটা রোগ যার নাম শুচিবাই। সঙ্গে সঙ্গে শরীরে প্রাণ ফিরে এলো আমি কোন অভিশপ্ত নই এবং অর্ধেক সুস্থ অনুভব করলাম।
ম্যাগাজিনে আরো জানলাম, এ রোগের চিকিৎসা হয় বিএসএমএমইউতে মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ওসিডি ক্লিনিকে। তারপর হতে আমি নিয়মিত ওসিডি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে অদ্যবধি নিজেকে সুস্থ এবং নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। পরবর্তীতে জানতে পারলাম মা,মামা বাড়ী থেকে জেনেটিক লোডের মাধ্যমে এ রোগ অর্জন করেছি। এখন ভাবি ‘মনের খবর ম্যাগাজিন’ যদি সেই ১৯৯৭ সালে হাতে পরত অথবা স্কুল পাঠাপুস্তক বা সঠিক তথ্য পেতাম তাহলে আমার ওসিডি ডাল-পালা শাঁখা-প্রশাখার মতো গজিয়ে এতটা বিস্তার হতে পারত না, জীবনটা হয়তো আরো রঙ্গীন হতো। সত্যিই মনের খবর আমার জীবনে আশার প্রদীপ হয়ে আসে।
ধন্যবাদ মনের খবর।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে